ঢাকা: উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী সরানো হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে সড়ক থেকে নির্মাণসামগ্রী সরানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ডিএমটিসিএলের এমডি এমএএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশন এলাকা ছাড়া সব স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হবে নির্মাণসামগ্রী। এরইমধ্যে আগারগাঁও এলাকা থেকে সরানো হচ্ছে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী। ওখানে (আগারগাঁও) গেলেই দেখতে পাবেন।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ফার্মগেট এলাকা পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সরানো হয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে কিছু এলাকাজুড়ে রাখা হয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী। এখানে প্রয়োজন অনুযায়ী বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সড়ক। কাজ শেষে আবার খুলে দেওয়া হচ্ছে সড়ক। ১২ নম্বর সেতারা কনভেনশন থেকে পূরবী সিনেমা হল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়ক থেকে সরানো হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। পূরবী সিনেমা হল বাস স্ট্যান্ড থেকে মেট্রোরেলের কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এখানকার সড়ক। শাখা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে পরিবহনগুলো। এই সড়কের পশ্চিম পাশের রাস্তাটি খোলা থাকলেও, মেট্রোরেলের কাজের জন্য পূর্বপাশের রাস্তাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে অরজিনাল ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দু'পাশ স্বাভাবিক আছে। এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। মেট্রোরেলের স্টেশনের কারণে ১০ নম্বর গোলচত্বরের পূর্ব পাশের সড়কটি বন্ধ। কিন্তু পশ্চিম পাশে ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন সড়ক খোলা রয়েছে। ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে আল হেলাল হাসপাতালের সামনের সড়কের দু’পাশের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এখান থেকে রাস্তা স্বাভাবিক থাকলেও কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কটি চিপা হয়ে রয়েছে। দুই লাইনের সড়কের যানবাহন এক লাইন দিয়ে যাতায়াত করছে। কখনো এখানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বৃষ্টি হলে জমছে পানি।
এছাড়াও দেখা যায়, শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার মাঝখানের এলাকায় মনিপুর স্কুলের সামনে পশ্চিম পাশে সড়কে রাখা হয়েছে মেট্রোরেলের বিভিন্ন সরঞ্জাম। এই সড়কের ও এক পাশ দিয়ে দুই লাইনের যানবাহন যাতায়াত করছে। এখানেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। শেওড়াপাড়া শামীম সরণি থেকে তালতলা পর্যন্ত পশ্চিম পাশের সড়কটি খানা-খন্দে ভরা। এখান থেকেও এক লাইন দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করছে। তালতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আগারগাঁও বিমানবাহিনী জাদুঘর পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী। কিন্তু আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে মেট্রোরেলের স্টেশনের কাজের নির্মাণসামগ্রী। আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত সড়কের থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজয় সরণির মোড়ে রয়েছে মেট্রোরেলের কিছু নির্মাণসামগ্রী। এখান থেকে যাতায়াত করতে মাঝেমাঝেই সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট।
আগারগাঁও এলাকার পথচারী মানিক মিয়া বলেন, আমাদের এলাকা থেকে কিছু কিছু নির্মাণসামগ্রীর সরানো হয়েছে। অনেক ধৈর্য্য ধরেছি, অনেক কষ্ট করেছি। আমার জীবন দশায় মেট্রোরেল দেখে যেতে পারবো বা চড়তে পারবো এটা ভাবলেই ভালো লাগে। গর্বে বুকটা ভরে যায়, আমাদেরও আছে মেট্রোরেল।
কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডের বাসযাত্রী ব্যবসায়ী আরমান আলী বলেন, কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া ও তালতলা এই এলাকার সড়ক অনেক চাপা, এই সড়কে পশ্চিম পাশের বেশিরভাগ সড়ক বন্ধ। পূর্বপাশের লাইনটি দিয়ে যানবাহন আসা-যাওয়া করছে। এতে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হয় যানজট। রাত ১০টার পরে কিছু কিছু স্থানে তো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন বাস অনেক এলাকা ঘুরে আমাদের গন্তব্যে নিয়ে যায়। পরিপূর্ণভাবে যদি মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রীর সরিয়ে ফেলা হয় তখন আমরা খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবো।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের মেট্রোরেল নির্মাণকর্মী মো. বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, মেট্রোরেলের কাজ অনুযায়ী ১০ নম্বর গোলচত্বরের সড়ক খোলা ও বন্ধ করা হচ্ছে। এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। গোল চত্বরে তেমন কোনো নির্মাণসামগ্রী নেই, প্রায় সবই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) মেট্রোরেলের রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল যুক্ত করতে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। ওই দিন তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পিলার-৫৮২ ও-৫৮৩ সংযোগকারী এই স্প্যান বসানো হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় মেট্রোরেলের স্প্যানের পুরো কাজ। এই স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে যেমন দৃশ্যমান হয় দেশের প্রথম মেট্রো রেললাইন। তেমনি শেষ হয় মেট্রোরেলের ৬ নম্বর লাইনের উড়াল পথের নির্মাণ কাজ। আগামী ১৬ ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার উড়ালপথে রেললাইন বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এমএমআই/এমআরএ