ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিধবা নারীর করা মামলায় এসআইকে গ্রেফতারের নির্দেশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
বিধবা নারীর করা মামলায় এসআইকে গ্রেফতারের নির্দেশ

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে ৩৬ বছরের এক বিধবা নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও ভুয়া বিয়ে করে প্রতারণার দায়ে কুড়িগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জলিলের (৪৫) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় বিজ্ঞ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এসআই আব্দুল জলিলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

এসআই আব্দুল জলিল গাইবান্ধা জেলার উত্তর ফুলিয়া সদর এলাকার আব্দুল শুকুর আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে কুড়িগ্রাম সদর থানায় কর্মরত রয়েছেন।

আদালত ও দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিধবা ওই নারীর মৃত স্বামীর ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনায় ওই নারী গত ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।  

এরপর এসআই আব্দুল জলিল পঞ্চগড় সদর থানায় কর্মরত থাকায় সাধারণ ডায়েরির তদন্ত শুরু করেন। এর মধ্যে এসআই বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখানো শুরু করে ওই বিধবা নারীকে। ওই বছরের গত ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার পূর্বজালাশী এলাকার বাদীনির মৃত স্বামীর বসতবাড়ির ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণ করেন জলিল। তখন ওই বিধবা নারীর সন্তানেরা শব্দ পেয়ে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন। পরে এসআই তাকে বিয়ে করতে চেয়ে মোবাইল ফোনে দুইজনকে ডেকে নিয়ে আসেন। ওই দুইজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজেদের কাজী ও মৌলভী পরিচয় দিয়ে একটি নীল কাগজে দুইজনের স্বাক্ষর করে নেন। একই সঙ্গে কবুল পড়ান। এরপর পঞ্চগড়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন শারীরিক মেলামেশা করেন।

ওই বিধবা নারী এসআই জলিলের কাছে বিবাহের কাবিননামা দেখতে চাইলে তিনি টালবাহানা করতে শুরু করেন। এরপর জলিল উপর মহলকে ম্যানেজ করে পঞ্চগড় থেকে কুড়িগ্রামে চলে যান। তাকে না পেয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৭ অক্টোবর পঞ্চগড় কোর্টে সাক্ষী দিতে এসে ওই নারীকে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। পরে পঞ্চগড় এসে আবারো স্বামী পরিচয়ে শারীরিক মেলামেশা শুরু করেন। এক পর্যায়ে কোর্টে সাক্ষী শেষে এসআই জলিল গোপনে কুড়িগ্রাম থেকে পালিয়ে যান। এরপর জলিল মোবাইলে মিথ্যা বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করার কথা শিকার করে বিভিন্ন রকম হুমকি দিতে থাকেন ওই নারীকে।

এরপর ওই নারীর সঙ্গে এসআই জলিল কোনো যোগাযোগ না করায় গত ২০২১ সালের ২৫ মার্চ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে ২০০০ সালের (সংশোধনী/০৩) আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।  

ভুক্তভোগী ওই নারী বাংলানিউজকে বলেন, আমার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতারণা করেছে সে। আমি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করলে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে শুরু করে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। যাতে করে কোন মা-মেয়ে পুলিশের এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান মিলন বাংলানিউজকে বলেন, বাদীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে এসআই কৌশলে পঞ্চগড় থেকে অন্য জেলায় চলে যান। এখন তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছেন না দিনি। তাই বাদী ওই নারী আইনের আশ্রয় নিলে এসআই আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু দমন আইনে আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে তদন্ত ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।