ঢাকা: ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গাড়িচালক কামাল হোসেন কালার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, ‘কালা কাউকে খুন করেনি। তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
তারা বলেছেন, ‘নির্দোষ কালা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। ’
রোববার রাজধানীর মীরবাগ মহল্লায় কালার মা-ভাই-বোন ও বাড্ডায় কালার স্ত্রীর কাছে গেলে তারা বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
কালা গ্রেপ্তারের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত তার পরিবারের এ সদস্যদের কারো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রোববার কালারই এক ঘনিষ্ট বন্ধুর সহযোগিতায় বাংলানিউজ তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।
কালার বড় ভাই আব্দুল হান্নান (৪৫) একটি সমবায়ী ঋণদান সংস্থার কর্মী।
তিনি বলেন, ‘কালা ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয়েছেন। নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার মুখ দিয়ে ইব্রাহীমকে হত্যার কথা স্বীকার করানো হয়েছে। ’
তিনি দাবি করেন, কালার বিরুদ্ধে কোনো থানায় একটি জিডিও নেই। অনেক কষ্টের মধ্যেদিয়ে কালা তার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কালা নিজে গুলি করে ইব্রাহীমকে হত্যা করার কথা স্বীকার করায় তার স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৩০) রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েন। বিভিন্ন চ্যানেলে খবর দেখেও তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
নার্গিস বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইব্রাহীম হত্যার আগে-পরের অনেক ঘটনাই কালা আমাকে জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় কালা বাড্ডার বাসায় আমাদের সঙ্গে ইফতার করেন। তখনও তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখা যায়নি। এর কিছুক্ষণ পরই এমপি শাওনের টেলিফোন পেয়ে রীতিমতো লাফিয়ে উঠে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যায় কালা। ’
নার্গিস আরও বলেন, ‘তার উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে যাওয়ায় বাধা দিলে আমাকে শুধু বলে- সর্বনাশ হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ’
কালার পরিবার সীমাহীন দুর্দশায়
রোববার সন্ধ্যায় বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক বাড্ডার পোস্টঅফিস গলিতে কালার ভাড়া করা টিনশেড বাসায় পৌঁছতেই তার স্ত্রী নার্গিস ও বড় মেয়ে ফারজানা আক্তার বন্যা (১১) অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাত্র আড়াই হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় একটি টিনশেড বাড়িতে অমানবিক জীবন-যাপন করেন তারা।
কালার অনুপস্থিতিতে পুরো পরিবারটিতে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্দশা। আগস্টের ঘর ভাড়া দিতে পারেননি এখনও। কালা গ্রেপ্তারের পর থেকে তিন বেলা খাবারও জুটছে না। এরইমধ্যে অর্থাভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া বন্যার স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
১১ মাস বয়সী শিশুপুত্র ইয়াসীন ভাইরাস জ্বরে ভুগছে। অথচ মা নার্গিস আক্তার তার চিকিৎসা বা ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারছেন না অর্থের অভাবে। আরেক মেয়ে কেয়া আক্তার (৫) বাবার খুবই ভক্ত। বাবা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে তার।
নার্গিস আক্তার জানান, ১৫ বছর আগে প্রেম করে কালার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ কারণে আজ পর্যন্ত কালার পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। প্রথমদিকে গাড়ির গ্যারেজে টুকটাক কাজের মাধ্যমে অতিকষ্টে কালা তার সংসার চালাতো। পরে এমপি শাওনের গাড়ির চালক হিসেবে যোগ দিলে কিছুটা হতাশা কাটে পরিবারের। কিন্তু ইব্রাহীম হত্যার ঘটনা নার্গিসের পরিবারকে আবার দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে কালার বড় ভাইয়ের মীরবাগের বাসায় দেখা হয় তার বৃদ্ধা মা তাছলিমা বেগমের সঙ্গে।
কালা গ্রেপ্তারের পর থেকেই শোকে-চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৭০ বছর বয়সী মা। তাছলিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কালা মুরগি জবাইয়ের রক্ত দেখলেও আঁতকে ওঠে, ভয় পায়। সে মানুষ খুন করতে পারে না। তাকে নিয়ে মিথ্যা নাটক বানানো হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৬ ঘণ্টা ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০