ঢাকা: সম্প্রতি পে-স্কেল নিয়ে করা বিমান শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনই কাল হয়ে দাঁড়ালো বিমানের পরিচালক (পরিকল্পনা) আমিনুল হক ও মহাব্যবস্থাপক (কার্গো) খাজা জুনায়েদের জন্য। রোববার তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিমানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর (অব.) জাকিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও বাংলানিউজ’র অনুসন্ধানে বরখাস্তের নেপথ্যে এ কারণই বেরিয়ে এসেছে।
জাকিউল ইসলাম বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। তবে বিদেশ যাওয়ার আগেই তিনি এ দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার চিঠিতে সই করে যান।
বিমানের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর পে-স্কেলের দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে সে সময় পরিচালক (প্রশাসন)’র দায়িত্বে থাকা আমিনুল হকের সংশ্লিষ্টতা ছিল। আর এ কারণেই চাকরি হারিয়েছেন তিনি।
সূত্র আরও জানায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষের আলোচনায় সমঝোতা হয়েছিল, আগস্ট মাসের মধ্যেই নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হবে। বিমানের কর্তা-ব্যক্তিরা আগস্টের মধ্যে একটি পে-স্কেল তৈরিও করেন। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন যা বেড়েছে তা খুবই সামান্য। তাই এ পে-স্কেল অর্ডারে তখন সই করতে রাজি হননি আমিনুল হক।
এ ব্যাপারটি শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। তারা জেনে যান, তাদের যে পরিমাণ বেতন বাড়ার কথা ছিল তা বাড়েনি।
এটা জানার পর শ্রমিক-কর্মচারীরা গত ১ সেপ্টেম্বর দিনভর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তার (বলাকা ভবন) অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখে ভাঙচুর চালান।
পরে দাবি মেনে নেওয়ার মুচলেকা দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওই দিন ছাড়া পান। পরের দিন আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন বিমান শ্রমিক-কর্মচারীরা। ফলে অনেকটা অসহায়ভাবেই বিমান কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের উপ-মহাবব্যস্থাপক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, আন্দোলনে বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিরা যথেষ্ট নাজেহাল হন। শোনা যাচ্ছিল এর শোধ হিসেবে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হতে পারেন।
এ দু’ কর্মকর্তার বরখাস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে গুঞ্জন সত্যে পরিণত হলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, সকালে অফিসে এসেই অব্যাহতির চিঠি পান আমিনুল ইসলাম।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে আমিনুল হককে শুধু বরখাস্তই করা হয়নি, তাকে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা (পেনশন, গ্রাচুইটি) থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, তিনি ৩০ বছর বিমানে চাকরি করেছেন। বিমানে আর এক বছর তার চাকরি ছিল।
চাকরিচ্যুত অন্য কর্মকর্তা খাঁজা জুনায়েদের চাকরি ২৫ বছর হওয়ায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে তাকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) পদ থেকে সরিয়ে পদাবনতি দিয়ে মহাব্যবস্থাপক (কার্গো) পদে বদলি করা হয়।
আমিনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো কারণ না দেখিয়েই আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই শুনছিলাম আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। শেষমেশ জানতে পেরেছি আন্দোলনের কারণেই আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদ বাংলনিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের বরখাস্তের ঘটনায় কারণ উল্লেখ থাকে না। এদের ক্ষেত্রেও তা উল্লেখ করা হয়নি। ’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে বিমান প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হয়।
বাংলাদেশ সময় ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১০