ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

গাড়ি ভাঙচুরকারীদের খুঁজে এনে কঠোর শাস্তি: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
গাড়ি ভাঙচুরকারীদের খুঁজে এনে কঠোর শাস্তি: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বুধবার (০১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন এবং ধানমন্ডিতে জয়িতা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বেপোরোয়া গতির দুই বাসের পীড়াপীড়িতে নির্মমভাবে দুজন শিক্ষার্থী মারা যায়। সেই সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনও পাস করে সরকার।

সম্প্রতি গত ২৪ নভেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী একটি গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জের ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমে আসে নটর ডেমসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকার রামপুরায় বাসচাপায় মো. মাঈনউদ্দিন ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বেশ কয়েকটি বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী রামপুরায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ৮০০ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেছে পুলিশ।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের বলবো যে, হ্যাঁ, এখানে ছাত্ররা যে মারা গেছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ’

সড়ক দুর্ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙাচোরা এটা ছাত্রদের কাজ না। এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান। লেখাপড়া করেন। ’

‘যারা দোষী অবশ্যই তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করা হয়েছে। সেটা আমরা করবো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক অনেক সর্তক এ ব্যাপারে এবং সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে বের করা হয়েছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশি না ১০/১২ বা ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে অনেক তফাৎ। এখনকার বাংলাদেশে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেটা দেখছে আগে সেরকম ছিল না। এটাও তাদের মাথায় রাখা উচিত। তাদের ভবিষ্যতে বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। ’

গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের সর্তক করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব জায়গার ভিডিও ফুটেজ আছে। যেকোনো সময় যেকোনো অপরাধ যে করবে তাদের ধরে ফেলা খুব একটা কঠিন হচ্ছে না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সেটা করা হচ্ছে। ’

‘বিশেষ করে এই গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেওয়া, যারা করবে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে। ওই গাড়িতে যদি কেউ মারা যায়, যে গাড়িতে আগুন দেবে সেখানে যদি কেউ মারা যায় বা আগুনে পোড়ে তার জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। ’

গাড়িতে অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এখানে একটা প্রশ্ন, এই অনুষ্ঠানে মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতির কাছে প্রশ্ন করছি এই যে, আগুন দেওয়া শুরু হলো, তো ওই গাড়িতে কি যাত্রী নাই? শিশু নাই? ওখানে কি ছাত্র-ছাত্রী নাই? ওই আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা মারাও যেতে পারে তার দায়িত্বটা কে নেবে? সে দায়িত্বটা কে নেবে?’

‘খুব স্বাভাবিকভাবে সেই দায়িত্বটা যারা ভাঙচুর করছে তাদের ওপর বর্তায়। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি আহত হয় বা নিহত হয় সেই দায়-দায়িত্বটাও তাদের নিতে হবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে একটা মানুষ মারা গেছে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে তার সেবা না করে লাঠিসোঁটা নিয়ে নেমে পড়লো, বাকি গাড়ি ভাঙা এবং আগুন দেওয়া!’

সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রাস্তাঘাটে চলার সময় সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। ট্রাফিক রুলস মেনে চলতে হবে। রাস্তার যেকোনো জায়গা থেকে, যেখান-সেখান থেকে রাস্তা পার হতে গেলে দুর্ঘটনা হবেই। কারণ একটা চলমান গাড়ি চট করে ব্রেক করতে পারে না। ব্রেকটা কষতে সময় লাগে। ’

তিনি বলেন, ‘রাস্তা পারাপারের জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। এই পারাপার করার জায়গা নির্দিষ্ট করা, সেখান থেকেই রাস্তা পার হওয়া সমীচীন। ওই হঠাৎ করে দৌড় দেবে। আর তারপর অ্যাকসিডেন্ট হবে, আর অ্যাকসিডেন্ট হলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, গাড়ি পোড়ানো—এটা কী ধরনের কথা?’

সিটি করপোরেশনের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের গাড়িতে এটা আমি রহস্যই বুঝলাম না। দক্ষিণে মারা গেলো এরপর আবার উত্তরে মারা গেলো। এর কারণটা কী? কেন? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে, এর জন্য কারা দায়ী। ’

তিনি বলেন, ‘তখন ময়লার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল, ময়লার গাড়ির সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাবে কেন? সেটাও বিবেচনা করতে হবে। আর গাড়ি যে চালাচ্ছিল ময়লার গাড়ি চালানোর মতো দক্ষতা তার আছে কিনা? সেটাও বিবেচনা করতে হবে। উভয়দিকে দায়িত্বশীলতা, কার কতটুকু আছে সেটাও দেখতে হবে। ’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারপার্সন লাকী ইনাম ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ম্যুরাল এবং জয়িতা টাওয়ারের ওপর দুটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২১
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।