ঢাকা: আগামী একশ’ বছরের উপযোগী এবং টেকসই একটি সংবিধান জাতিকে উপহার দিতে কাজ করছে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটি। সে অনুযায়ীই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ তৈরি করে সংসদে উপস্থাপন করা হবে এমন অঙ্গীকার রয়েছে কমিটির।
রোববার এ কমিটির বৈঠকের পর একাধিক সদস্য বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, আগামী ৬০ থেকে ১০০ বছরের কথা মাথায় রেখে এই দীর্ঘ সময়ের উপযোগী করে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ মালা তৈরি করা হচ্ছে। এতে দলীয় রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে ১৬ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হবে।
একটি টেকসই সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যেই সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
এদিকে কমিটি সূত্র জানায়, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম, ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা না রাখা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলেও স্পর্শকাতর ও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করতে পারে এরকম কোনো বিষয়ে হাত না দেয়ার ব্যাপারে সদস্যরা একমত একমত হয়েছেন। ফলে এই বিষয়গুলো বহাল রেখেই সংশাধনের সুপারিশ আসছে। রোববারের বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর তারা এ ঐক্যমত পোষণ করেছেন বলেও জানায় সুত্র।
তবে, এই বিষয়গুলোর ওপর দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন কমিটির সদস্যরা। ফলে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে সংশোধনের সুপারিশ উপস্থাপন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। এমনকি এর পরবর্তী অধিবেশনেও সুপারিশ উপস্থাপন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে, রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকেই বিশেষ কমিটির সংবিধান সংশোধনে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ মতামতের পর সংবিধান সংশোধন ও হালনাগাদের কাজ শুরু হবে বলে কমিটির কো-চেয়ারম্যান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানান।
সংসদ ভবনের ক্যাবিনেট কক্ষে কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ সভায় আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় কমিটির ৫ম বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকেই কমিটির সদস্য ছাড়াও দেশের আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের ডাকা হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায় আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, ড. কামাল হোসেন, ড. এম জহির, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তৌফিক নেওয়াজ, মাহমুদুল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠক শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো কীভাবে সংবিধানে সংযুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগামী বৈঠকে এ ব্যাপারে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। তাদের মতামত নিয়ে আমরা মুল কাজে চলে যাবো। ’
তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সবার মতামতের অধিকার আছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংশোধনের সময় যাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল, সংবিধান সংশোধনে মুলত তাদের মতামত নেওয়ার জন্য ডাকা হবে বলে সুরঞ্জিত জানান।
কত জন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হবে সে ব্যাপারে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে ১০/১২ জনকে ডাকা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রোববারের বৈঠকে কমিটির সদস্য ছাড়াও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আব্দুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনিক কাউকে রাখা হয়নি। তবে কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, হাসানুল হক ইনু ও ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
বাংলাদেশ সময় ১৯০২ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০