ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জনদুর্ভোগের অপর নাম কামারুজ্জামান টার্মিনাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
জনদুর্ভোগের অপর নাম কামারুজ্জামান টার্মিনাল ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ইটের খোয়া উঠে গেছে। একটু পরপরই খানাখন্দ।

কোথাও বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে আছে বৃষ্টির পানি। এখানে-সেখানে নোংরা পানি আর জলকাদা।

বলছি রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কথা। ছোট-বড় গর্ত হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে টার্মিনালটি। দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল অবস্থা চললেও নেই কোনো সমাধানে উদ্যোগ।

চরম ভোগান্তিতে থাকা বাস চালকরা তাদের বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোচ টার্মিনালে পার্কিং না করে মহাসড়কের ওপর পার্কিং করছেন। মহাসড়কে নিত্যদিন যানজটসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাস যাত্রীরা। ফলে বাস টার্মিনালটি এখন জনদুর্ভোগের টার্মিনালে পরিণত হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অবস্থান। এখান থেকে দেশের নানা স্থানে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। টার্মিনালটি ২০০০ সালে ৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচে নির্মাণ করা হয়েছিল। টার্মিনালে বাস যাতায়াতের জন্য আরও ২৩ কোটি টাকায় চার কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটির কয়েক বছর ধরে সংস্কার নেই।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমে আছে টার্মিনালজুড়ে। টার্মিনালে নেই কোন শৃঙ্খলা ও পরিবেশ। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জল নিষ্কাশনও সম্ভব নয়। পানি অনেকদিন না সরার কারণে গাড়িগুলো প্রতিদিন কাদাপানি মাড়িয়ে অবস্থান করতে হয়। ভেতরে কিছু গাড়ি রাখা হলেও যাত্রী ওঠা-নামানো করা হচ্ছে টার্মিনালের বাইরের সড়কে। ফলে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে সেখানে যানজট দেখা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় রাজশাহী-পাবনা রুটের একটি বাসের চালক কালাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, টার্মিনালে ঢুকতে গেলেই বাসের চাকা গর্তে পড়ে যায়। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। অনেক সময় বাস নষ্ট হয়ে যায়। আবার যাত্রীদের সুবিধার জন্য সড়কেই বাস রাখতে হয়।

আরেক বাস চালক রহমত উল্লাহ বলেন, সারা বছরই এ রকম বেহাল থাকে টার্মিনালটি। এখন বৃষ্টির পানি জমে কাদা হয়েছে। কিন্তু অন্য সময় গাড়ি ধোয়া-মোছার পানি জমা হয়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এ রকম খারাপ অবস্থা। কাদা-পানি ও গর্তের কারণে যাত্রীরা টার্মিনালে ঢুকতে চায় না। আমরাও কাউন্টার ছেড়ে বাইরে গিয়ে টিকিট বিক্রি করি। এ টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল করে। তাই দ্রুত টার্মিনাল সংস্কার করা প্রয়োজন।

কথা হয় নওগাঁরগামী একটি বাসের যাত্রী অহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য এসেছিলাম। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। টার্মিনালের নোংরা পানি মাড়িয়ে গাড়িতে উঠতে হয়েছে। কাপড়-চোপড় নোংরা হয়ে গেছে।

একই বাসের আরেক যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ষায় কাদা-পানি, গ্রীষ্মে ধুলো-বালির কারণে বাস টার্মিনালটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে সড়কের ওপর থেকে ঝুঁকি নিয়েই বাসে উঠতে হয়। সড়কে দাঁড়িয়েই বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের এই দুরবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চললেও সেটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিষয়টি একাধিকবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন বলেন, টার্মিনালে খানাখন্দে পড়ে অনেক সময় বাসের যন্ত্রপাতি ভেঙে যায়। আমরা বারবার আরডিএ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেন না। কাদা-পানি ও গর্তের কারণে যাত্রীরা টার্মিনালে ঢুকতে চায় না। ফলে রাস্তাতেই মেরামত এবং যাত্রী ওঠানামার কাজ করতে হয়।

এ নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেনের সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
এসএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।