ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

'হামাগুড়ি'তে ওহিদুরের স্বপ্নযাত্রা!

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
'হামাগুড়ি'তে ওহিদুরের স্বপ্নযাত্রা!

ইবি: আমিনুর রহমান! বয়স আনুমানিক ৫০ হবে, হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের সামনে। হল গেটের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার হার না মানা বুকের মানিকের আসার অপেক্ষায়।

সবাই দ্রুততার সঙ্গে বাবা-মা বা তাদের অভিভাবকদের কাছে ফিরছিলেন। ব্যস্ত ভিড়ের মাঝে হঠাৎ দেখা গেলো চশমা চোখে একটা ছেলে হাতে ভর দিয়ে (হামাগুড়ি দিয়ে) হলগেট পার হয়ে সামনের দিকে আসছে। বাবা আমিনুর সামনে এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে বরণ করে নিলেন। বাবার এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছে অনেকে। ফুটে উঠেছে প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা।

ছেলেটির নাম ওহিদুর। হামাগুড়ি দিয়েই এসেছেন তার স্বপ্নপূরণের পথটা সুগম করতে। রোববার (১৭ অক্টোবর) গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্নপূরণের পথে এগোতে হামাগুড়ি-ই তার একমাত্র মাধ্যম।  

দুপুর ১টার দিকে পরীক্ষা শেষ করে ভবনের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। শারীরিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে এ পর্যন্ত আসতে নানা প্রতিকূলতার গল্পও শোনা হয় তার কাছ থেকে। শুনিয়েছেন রাজশাহী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শেষ করে আসা স্কুল-কলেজের গল্প। কথা বলার একপর্যায়ে তার চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা। সে অশ্রুতেই স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা ওহিদুরের। দুটি হাতে ভর দিয়ে এবং হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন তিনি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ওহিদুর বলেন, 'আমি হাঁটতে পারি না। হাতের ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এতে আমার খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কষ্ট ছাড়া যে আবার কিছু অর্জন করাও যায় না! তাই তো রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছি। যত কষ্টই হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আমার স্বপ্ন। এর আগে ডেন্টালে পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু চান্স পাইনি। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা বাকি রয়েছে। আশা করি ভালো একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাব। '

খানিকটা বাদে চোখের জল মুছে দৃঢ় মনোবল নিয়ে বলেন, স্বপ্ন দেখি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করার। পড়াশোনা শেষ করে এমন একটা জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে চাই যেখান থেকে আমার মতো সংগ্রাম করে আসা এমন আরও যুবকদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

ওহিদুরের বাবা বলেন, মানুষের ইচ্ছা শক্তিটা সবচেয়ে বড়। সে যা চায় সৃষ্টিকর্তা যেন তাই বানায়। ছেলের স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিষয়ে পড়াশুনা করা। প্রতিষ্ঠিত হয়ে অবহেলিত প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা। আমার ছেলে হাঁটতে পারে না, হুইল চেয়ারে নিয়ে যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হয়। তবুও আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে আসলে শারীরিক কিংবা আর্থিক সংকট কোনো সংকটই না। অদম্য ইচ্ছা আর প্রবল অধ্যবসায়ই একজন মানুষের স্বপ্নপূরণের প্রধান সারথি। যার প্রমাণ ওহিদুরের মতো হার না মানা মানুষগুলো। মসৃণ হোক এসব মানুষগুলোর পথচলা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।