ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গড়াই নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
গড়াই নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা

মাগুরা: কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে আর বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিলো একে একে নৌকাগুলো। চড়ন্দারের ঘন্টার তালে তালে মাঝি মাল্লার বৈঠার ছন্দে ছন্দে যৌবন ভরা  গড়াই নদীর বুকে ছুটে চলছিলো রকেট, জলপরি, লালন শাহ, সহ বাহারি নামের আটটি  নৌকা।

মাঝি- মাল্লাদের হৈ হৈ রবে নেচে ওঠে গড়াই নদীর দুই তীর। বৈঠার ছন্দে ছন্দে তুমুল গতিতে চলছিলো অন্যকে অতিক্রম করার প্রতিযোগিতা। লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ- মাঝি-মাল্লাদের রং-বেরঙের এসব পোশাকই বলে দেয় মাগুরা গড়াই নদীতে কতটা জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাগুরার প্রয়াত সাংসদ আছাদুজ্জামান স্মৃতি নৌকা বাইচ উংসব।

আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে মধুখালীর ডুমাইন ঘাট  থেকে শুরু হয়ে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাজাইল গড়াই ব্রিজের নিচে এসে শেষ হয় এই নৌকা বাইচ। নান্দনিক এই  দৃশ্য দু’চোখে অবলোকন করে পুরো  আনুষ্ঠানিকতা উপভোগ করতে সকাল থেকেই গড়াই নদীর দুই তীরে জড়ো হন মাগুরা সহ পাশ্ববর্তী তিন জেলার প্রায় লক্ষ্যাধিক মানুষ। নৌকা বাইচ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন মেলা । নানা বয়সী নারী –পুরুষ ও শিশু কিশোদের সরব উপস্থিতি আর উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় এই মেলায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গা পূজার মধ্যে এই আয়োজন পূজার আনন্দকে আরোও বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অনেকে মতামত ব্যাক্ত করেছেন।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। চড়ন্দারের ঘণ্টার টং টং আওয়াজের সাথে তালে তাল মিলিয়ে বাইচারা বইঠা টানেন হেলেদুলে। ৮টি সুসজ্জিত বাইচের নৌকা আজকের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই নৌকা বাইচের নান্দনিকতা উপভোগ করতে গড়াই নদীর দুই পাড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাজার হাজার দর্শেকের সরব উপস্থিতি নৌকা বাইচের আনন্দকে ছাপিয়ে দেয়।   

ফরিদপুরের মধুখালী থেক আগত সান্টু মন্ডল বলেন, পূজার ব্যাস্ততা থাকা সত্বেও নৌকা বাইচের খবর শুনে দেখতে এসেছি। ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন ওলিয়ার রহমান। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক দিন এই ধরনের নৌকা বাইচ বন্ধ ছিলো। তাই এখানে নৌকা বাইচ উৎসব দেখতে এসেছি। রাজবাড়ি জেলা থেকে স্বামী রাজেশ গোপালের সাথে ছোট্র শিশুপুত্র নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছেন শিলা রানি পাল। তিনি বলেন আমার মনি কখনো নৌকা বাইচ দেখেনি। তাই এখানে নৌকা বাইচ ও মেলা দেখতে এসেছি। খুব মজা লাগছে।  

আজকের এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় খুলনা থেকে আগত জলপরি নৌকা প্রথম স্থান দখল করে জিতে নেয় একটি ১০০ সিসি রানার মোটর সাইকেল। কুষ্টিয়া থেকে আগত লালন শাহ দ্বিতীয় হয়ে অর্জন করে একটি ৮০ সিসি রানার সোটর সাইকেল। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মহম্মদপুরের আতিক হাসানের হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় একটি ফ্রিজ এবং একটি এল-ই-ডি টিভি দেওয়া হয় চতুর্থ স্থান অধিকারী আল্লাহর দান দলের হাতে ।

বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন মাগুরা- ১ আসনের সংসদ সদস্য মো: সাইফুজ্জামান শিখর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা প্রশাসক ড: আশরাফুল আলম, পুলিশ সুপার মো: জহিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিউজা উল জান্নাহ, শ্রীপুর থানার ওসি সুকদেব রায় প্রমুখ।

নৌকা বাইচের উদ্যোক্তা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাউনূর রশিদ মুহিত বলেন, করোনার কারণে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো। তাই মাগুরা -১ আসনের সংসদ সদস্য মো: সাইফুজ্জামান শিখরের বাবা মাগুরার প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত আছাদুজ্জামান স্মৃতি নৌকা বাইচ এবং মেলার মাধ্যমে আমরা সেই সংস্কৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, বাঙালীর চিরায়ত সংস্কৃতি  ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষের সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে এই  নৌকা  বাইচ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।