ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফাইলেই বন্দি রাজশাহী শহরের আয়তন!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
ফাইলেই বন্দি রাজশাহী শহরের আয়তন!

রাজশাহী: পদ্মা নদীর তীরের প্রাচীন শহর রাজশাহী। আয়তনের দিক থেকে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ছোট রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।

বর্তমানে এই সিটির আয়তন মাত্র ৭২ বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে রাসিক কর্তৃপক্ষ ও সরকার সীমানা পুণঃনির্ধারণের অভাবে আয়তন বাড়ানো যাচ্ছে না।

অথচ সীমানা বাড়লে এই সিটির আয়তন হবে ২৭২ বর্গকিলোমিটার। এতে প্রাচীনতম এই মহানগরীর আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন কয়েক লাখ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাসিক কতৃপক্ষ দুই বছর আগে সীমানা বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সীমানা বাড়িয়ে চারটি থানা থেকে ১২টি থানায় রূপ নিয়েছে। প্রায় চার বছর আগ থেকেই মহানগর পুলিশের ২০০ বর্গকিলোমিটার কর্ম এলাকা বাড়ে। এরপর রাসিকও ওই এলাকায় সীমানা বাড়ানোর কাজ শুরু করে। সে অনুযাযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় চিঠি চালাচালিও হয়।

পরবর্তিতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে সার্বিক দিক বিবেচনা করে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরই মধ্যে কৃষিসহ তিনটি দপ্তর থেকে রাসিকের সীমানা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে সুপারিশ না যাওয়ায় এখনো মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিতে পারছে না। ফলে মন্ত্রণালয়েও আটকে রয়েছে রাসিকের সীমানা বাড়ানোর ফাইলটি।

তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসন বলছে, সীমানা বাড়ানো সংক্রান্ত ফাইলটি তাদের কাছে নেই। এর আওতায় পড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নাগরিক সেবার পরিধি বাড়াতে ও পরিকল্পিত নগরায়নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেবল ইট-কাঠের জঞ্জাল নয়, সবুজ ও পরিকল্পিত মহানগরী গড়তে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি থাকবে সবুজ মাঠ।
সীমানা বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে শহরের পাশে থেকেও কয়েক লাখ মানুষ রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজসহ মহানগরীর আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ব্রিটিশ আমলে মাত্র ১০ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে ১৮৭৬ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কের অভ্যন্তরে টিন সেডের দুটি কক্ষে রাজশাহী পৌরসভা (রামপুর-বোয়ালিয়া মিউনিসিপ্যালিটি) কাযর্ক্রম শুরু করে। পরে ভুবন মোহন পার্ক থেকে রাজশাহী কলেজের একটি কক্ষে পৌরসভা দফতর সরিয়ে নেওয়া হয়। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হর গোবিন্দ সেনকে প্রথম চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্যের প্রথম টাউন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্যই ছিলেন সরকার মনোনীত। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক ও মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন পদাধিকার বলে সদস্য। পরবর্তীতে পৌর নিবার্চনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।

১৮৮৪ সালে মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্টের ৩ নম্বর ধারা মতে ২১ জন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১৪ জন ছিলেন নিবার্চিত এবং ৭ জন মনোনীত। ১৯২১ সালে সোনাদীঘির পাড়ে আগের পৌর  ভবনটি নির্মিত হলে রাজশাহী কলেজ থেকে পৌরসভা দফতর, সিটি ভবনে স্থানান্তরিত হয়।

পৌর সেবা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১৯৩০ সালে ৮টি পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

১৮৭৬ সালে যখন পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন লোক সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার জন। ১৮৭৬ সালে পৌরসভার একটি মিউনিসিপ্যাল বোর্ডও গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের বিধান অনুযায়ী মিউনিসিপ্যাল বোর্ডই মিউনিসিপ্যাল কমিটি হিসেবে কাজ করে আসছিল। মিউনিসিপ্যাল কমিটির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার আয়তন ছিল ৬ দশমিক ৬৪ বর্গ মাইল পশ্চিমে হড়গ্রাম বাজার থেকে পূর্বে রুয়েট পযর্ন্ত ছিল এর এলাকা। ১৯৫৮ সালের ৫ অক্টোবর তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে. এম. এস রহমান সরকারি নির্দেশে মিউনিসিপ্যাল কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেন।

এরপর ১৯৮৭ সালের সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহী পৌরসভা পৌর কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। পরের বছর ১৯৮৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পৌর করপোরেশন থেকে সিটি করপোরেশনে পরিণত করা হয়। এর প্রথম মেয়র হন আব্দুল হাদি। পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর আয়তন বেড়ে গিয়ে ৭২ বর্গ কিলোমিটার হয়। এই আয়তনেই বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসকের দফতরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শাহানা আক্তার বলেন, সীমানা বৃদ্ধি সংক্রান্ত ফাইলটি আমাদের কাছে নেই। আমাদের অফিস থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দফতরে প্রতিবেদন চাইতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে থাকতে সীমানা বৃদ্ধির ফাইল থাকতে পারে।

রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দেশের প্রাচীন একটি সিটি করপোরেশনের আয়তন মাত্র ৭২ বর্গকিলোমিটার। এই ছোট্ট জায়গার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করছে। বর্তমান সরকারের আমলে নগরীতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। আগামীতে সিটি করপোরেশনের সীমানাবর্ধিত হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নেও কাজ করা যাবে। কিন্তু সীমানা বাড়ার ফাইল জেলা প্রশাসকের দফতরে আটকে থাকায় সেটি থমকে রয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষও সিটি করপোরেশনের মধ্যে প্রবেশ করতে উন্মুখ হয়ে আছেন।


বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এসএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad