ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

লাল শাপলা বিল শত পরিবারের আয়ের উৎস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
লাল শাপলা বিল শত পরিবারের আয়ের উৎস

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের লাল শাপলার বিলে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করে বছরের পর বছর অর্থ উপার্জন করছেন শতাধিক পরিবার। উপার্জিত অর্থ দিয়ে এক সময় সংসার চালানো গেলেও এখন তা দিয়ে শুধু পান-সুপারির টাকা হয় বলে দাবি অনেকের।

আবার অনেকে দাবি করছেন, খানিক সময় মাছ শিকার করে একটি পরিবারের সাপ্তাহিক আমিষের যোগান দেয়া সম্ভব এ বিল থেকে।

মাছ ধরতে সারাদিন এ বিলে নৌকা আর জাল নিয়ে ঘুরে বেড়ান স্থানীয়রা। জাল ফেললেই ওঠে আসে ভ্যাদা, কৈ, খলিসা, পুঁটি, টাকি, শৌলসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ।

ছোটবেলা থেকেই এ বিলের পানিতে মাছ শিকার করে আসছেন ষাটোর্ধ্ব আ. ছত্তার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগের থাইক্যা বিলে মাছের পরিমাণ কমছে। মোর (আমার) ছোডকালে (ছোট বেলায়) এতো মাছ পাওয়া যাইতো যে বর্ষা কালে অন্য কোন কামই কেউ হরতো (করতো) না, আর এহন দাম বাড়লেও যে মাছ পাওয়া যায় হ্যা (তা) দিয়া পান-সুপারির টাহাও হয়না।

ছাত্তার বলেন, এতো মাছ খাইলে থাকবেও বা ক্যামনে! এহন তো ডিম পাড়ার সবুরও (অপেক্ষা) হরে না কেউ, হ্যার আগেই ধইরা হালায় (ধরে ফেলে)। হ্যাইয়ার (তার) উফরে আইজকাল (বর্তমান সময়ে) বিলের মধ্যে পানি আটকাইয়া মাছ চাষ হরতাছে (করছে) অনেকে। হ্যাগো (তাদের) মাছের সুবিধা হরতে যাইয়্যা, বিলের মাছ বিপদে পরতাছে।

মোহাম্মদ নামে অপর এক জেলে বাংলানিউজকে জানান, আগৈলঝাড়ার বাগধার বিলের অংশে এখনো কেউ পানি আটকে মাছ চাষ করছে না, তাই এখানে দেশি মাছের যেমন সংকট নেই, তেমনি বিলের পানিতে মাছ শিকারেও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্ত পার্শ্ববর্তী উজিরপুরের সাতলা গ্রাম অংশের বিলে কোটি টাকার মাছ চাষ হয়। সেখানে সাধারণ জেলেরা মাছ শিকার করতে পারে না, এবং মাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে যে ধরণের খাবার দেওয়া হয় তাতে পানি নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বিলে দেশি প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমতে পারে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার সহকারী মৎস কর্মকর্তা রোজিনা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, পেনে পদ্বতিতে মাছ চাষ হলে বিলের অন্য দেশীয় প্রজাতির মাছ যা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, তার ওপর কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মাছ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই চায়না জাল দিয়ে তা ধরে ফেলা হচ্ছে। এতে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। এ জাল রোধে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে।

এদিকে বরিশাল জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, চাষের মাছের কারণে বিলের পানিতে খাবারের পরিমাণ বাড়ছে, এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই বরং মাছের উৎপাদন বাড়ছে।
স্থানীয় মৎস শিকারী মো. সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতির চিন্তা না করে প্রাকৃতিক নিয়মে মেধা ও শ্রম দিয়ে কৌশল খাটিয়ে মাছ শিকার করলে এখনো ভালো মাছ এ বিল থেকে পাওয়া যাবে।

জব্বার নামে অপর এক জেলে বাংলানিউজকে বলেন, এহনও এই বিলে একবেলা মাছ ধরলে কয়েকদিন হ্যা (সেটা) দিয়া চলে, বাজার আর হরা (করা) লাগে না। দু’দিন আগেও আমি রাইতে ২ ঘণ্টা ট্যাডা (কোচ) দিয়া মাছ কোপাইছি (শিকার), যা দিয়া ঘরের এক সপ্তাহের বাজার হইয়্যা গ্যাছে।

তারমতে এ বিলে শাপলা, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসসহ জলজ উদ্ভিদের কারণে মাছের প্রচুর প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়। তাই প্রাকৃতিক ভাবেই মাছগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে এ বিলে প্রচুর শৌল মাছ ধরা পরে, গতবছরও পড়েছে। আর এ বিলের শৌল মাছ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি খেতেও খুব সুস্বাদু।

জব্বার বলেন, এ বিল অইতে (থেকে) শুধু শাপলা তোলা আর মাছ ধরাই হয় না, এহানে যে ঘাস হয় তা ছাগল, গরুসহ গবাদি পশুর খাবার। আবার বিলের পাশে হাঁস পালনেও সুবিধা। বেশি একটা খাবার খরচ নাই, হাঁসগুলা বিল অইতে খাওন যোগাড় কইরা খায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
এমএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।