ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সমুদ্রযাত্রা অনিশ্চিত উপকূলের জেলেদের

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২১
নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সমুদ্রযাত্রা অনিশ্চিত উপকূলের জেলেদের

বরগুনা: বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত সব মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননের জন্য ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য উপকূলের জেলেদের সাগরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। এ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন জেলেরা।

 

বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটসহ অন্যান্য ঘাটে জেলেদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ৬৫ দিন পরে শুরু হবে জেলেদের কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকার। আর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সেই চিরায়ত দৃশ্য পাথরঘাটার জেলে পল্লিগুলোতেও দেখা যাবে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই গভীর সমুদ্রে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ, এই নিম্নচাপ শেষ না হলে জেলেরা সাগরে যেতে পারবে না। আবার অনেকে ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু করলেও তাদের মধ্যে অনেকে উপকূলে ফিরেছে আবার অনেকে জীবন বাজি রেখে সাগরে গেছে।

ছোট পাথরঘাটা এলাকার জেলে মনির, বিএফডিসি ঘাটের জেলে ইলিয়াস, কালামসহ একাধিক জেলেরা জানান, একদিকে করোনা মহামারি অন্যদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিবারগুলোতে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। গত বছর সাগরে মাছ কম ধরা পরেছে। মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে নিতে এখন তারাও নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এ নিষেধাজ্ঞার আগে যখন সাগরে যায় তখন মনে হয়েছে মাছের মধ্যে করোনা শুরু হয়েছে, কারণ সাগরে মাছ নেই বললেই চলে। এখন আবার শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। কেউ কেউ মাছ শিকার করতে গেলেও তাদের মধ্যে অনেকে উপকূলে ফিরে এসেছেন। এভাবে চলতে
থাকলে তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।  

আল্লাহর দান ট্রলারের মালিক মো. আবুল হোসেন ফরাজী জানান, জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ সময় থেকে শুরু হয়ে ইলিশ আহরণের মৌসুম চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে ৬৫ দিনের মাছ শিকারের সরকারি নিষেধাজ্ঞাও শেষে হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবে পার করে গেলেও সাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। তার তিনটি ট্রলার রয়েছে এর প্রত্যেকটি ট্রলারের জন্য তার ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার বাজার করতে হবে। এর আগে তো সাগরে জালে ইলিশ ধরা পরেনি। এবার যে পরিমাণ টাকা এর পেছনে ব্যয় করছেন তাতে এ নিষেধাজ্ঞার পরে যদি ইলিশ না পাওয়া যায় তবে তিনিসহ তার মতো অন্য ট্রলার মালিকদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এখন আবার সাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। এখন পথে বসে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকারিভাবে যদি কোনো সহায়তা তাদের না করা হয় তবে এ মৎস্য শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, হঠাৎ এই নিম্নচাপের কারণে যারা সাগরে গিয়েছিল তারা মাঝপথ থেকে অনেকেই ফিরে এসেছেন। যারা সাগরে গেছে তাদের দাবি আর কতো দিন মানুষের কাছ থেকে দার ও দাদন নিয়ে খাবো। হয় ইলিশ না হয় অন্য মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে আমাদের জানান।

তিনি আরো জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই আমরা এর বিরোধিতা করেছি এবং বিবেচনা সাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে আসছি মৎস্য মন্ত্রণালয়কে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি, কিন্তু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে উপকূলের জেলেরা নিঃস্ব হয়ে যাবে। তারপরেও সরকারি আইন মেনে চলতে হবে তাই জেলেরাও মেনে চলছে। তাছাড়া সরকার যে সহায়তা দেয় তাতে কিছুই হয় না জেলেদের। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়টি পূর্ণবিবেচনায় রাখে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।