ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লালপুরের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, মামলা, গ্রেফতার দুই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
লালপুরের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত, মামলা, গ্রেফতার দুই ...

নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটক রেখে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার কাছ থেকে জোর করে দলিলে ৮ লাখ টাকা পাওয়ার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর ২টার সময় বাগাতিপাড়া উপজেলার স্যান্যালপাড়া গ্রামে নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।  

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী খাদ্য কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাতে বাগাতিপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযুক্ত মো. রাসেল আহমেদ (৩৮) ও মো. আবুল কালাম আজাদ (৩৭) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে অপর আসামি রোকনুজ্জামান পলাতক রয়েছেন।  

গ্রেফতার রাসেল লালপুর উপজেলার নেংগপাড়া গ্রামের হাসান মণ্ডলের ছেলে এবং আবুল কালাম বিজয়পুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা দুইজনই গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকনের সহযোগী বলে জানা গেছে।

এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রথমে লালপুর থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু ঘটনাস্থল বাগাতিপাড়া হওয়ায় মামলা গ্রহণ না করে বাগাতিপাড়া থানায় করার পরামর্শ দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন পুলিশ। পরে বাগাতিপাড়া থানায় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের অভিযোগপত্রটি এজাহার হিসেবে দায়ের করা হয়।  

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি বাগাতিপাড়া উপজেলার অভিযোপত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই বাদীকে বাগাতিপাড়া থানায় অভিযোগ দাখিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর ২টার দিকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল সমর্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপির ঠিকাদারী ব্যবসার পার্টনার রোকনুজ্জামান রোকন ফোন করে তাকে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে যেতে বলেন। রোকনের ফোন কল পেয়ে তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলায় এমপির বাড়িতে উপস্থিত হন। এসময় সেখানে উপস্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুল ইসলাম এবং তার দুই সহযোগী রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম তাকে এমপির বসার ঘরে নিয়ে যান।

এসময় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চলে যান। এমপি বকুল চলে যাওয়ার পর পরই রোকনুল ইসলামসহ তার সহযোগীরা তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে বসেন। এসময় তারা তাকে বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকতার পদ অনেক লাভজনক। এক বছর ধরে আছেন অথচ আমাদের সঙ্গে একদিনও দেখা করেননি। এসময় দলীয় কাজে তাদের ২০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে তার ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতনসহ কিল ঘুষি। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ওই ঘরে তাকে বসিয়ে রাখা হয়।

তিনি আরো জানান, একপর্যায়ে রাসেল তার কাছে ৮ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করে বসেন। টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে নইলে ছাড়া হবে না এমন হুমকি দিতে থাকেন। একইসঙ্গে চলতে থাকে কিল-ঘুষিও। পরে তারা ঘর থেকে বের করে রাস্তায় এগিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের দাবিকৃত পাওনা বাবদ ৮ লাখ টাকার জন্য দলিলে তার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেন। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে লালপুর থানার ওসির পরামর্শ ও সহযোগতিায় রাতেই বাগাতিপাড়া থানায় এসে এজাহার দাখিল করেন।

এদিকে ওই ঘটনার পর রাতেই নাটোরের গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে। ওসি ডিবি শফিকুল ইসলাম দুইজনকে গ্রেফতার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

অপরদিকে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি)  মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলো তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বাংলানিউজকে জানান, তার বাসায় বা বৈঠকখানায় কাউকে মারপিট বা আটক রাখার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি সাজানো বলে মনে হচ্ছে।  

তিনি বলেন, লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নিজেই তার প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছিলেন। খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি আমার সহায়তার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলে চলে যাই। তাকে কেউ ডেকে আনেননি বা আমার বাড়িতে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার বিষয়টিও সঠিক নয়।

তিনি দাবি করে বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এমন একটি নাটক সাজাতে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে আমার বাসায় পাঠিয়েছেন। ওই খাদ্য কর্মকর্তাও আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন। তিনি সেটি না করে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।  

তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এমপি বকুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad