ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এমন সম্মান শুধু আল্লাহই দিতে পারেন: নতুন সেনাপ্রধান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এমন সম্মান শুধু আল্লাহই দিতে পারেন: নতুন সেনাপ্রধান

ঢাকা: সেনাবাহিনীর মতো একটি পেশাদার, সুদক্ষ ও গৌরবমণ্ডিত বাহিনীর নেতৃত্ব পাওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, এটা একটি স্বর্গীয় আর্শীবাদ এবং এমন সম্মান শুধু আল্লাহই দিতে পারেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায় বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

দায়িত্ব গ্রহণের পর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটি পেশাদার, সুদক্ষ ও গৌরবমণ্ডিত বাহিনীর নেতৃত্ব (১৭তম সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে) দেওয়ার সৌভাগ্যলাভের জন্য আমি মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এটা একটি স্বর্গীয় আর্শীবাদ এবং এমন সম্মান শুধু আল্লাহই দিতে পারেন। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমার ওপর আস্থা রেখে এই গুরুদায়িত্ব আমাকে অর্পণ করার জন্য।

সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করে এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তার অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যেতে আমি আপনাদের সবার দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি। আমি বিশ্বাস করি যে সবার সহযোগিতায় আমি বাংলাদেশ সরকারের আমার ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে সক্ষম হবো।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার একক নেতৃত্বে সুচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, আমি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। সেই শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি স্বাধীন দেশে গর্বের সঙ্গে বাস করতে পারছি। একই সঙ্গে আমি বিশেষভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সেসব বীর শহীদদের যারা জাতি ও মানবতার কল্যাণে দেশে ও বিদেশে নিজ জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি সব শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

আইএসপিআর জানায়, জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা শহরের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন অধ্যাপক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৮০ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এক নাগাড়ে দীর্ঘ দুই যুগ একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে খুলনাবাসীর কল্যাণে বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর খুলনাবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ তার নামে ‘প্রফেসর রোকন উদ্দিন সড়ক’ এর নামকরণ করে।

জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ৯ম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সঙ্গে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন।

শফিউদ্দিন আহমেদ ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্ট্যাডিজ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) থেকে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজে প্রথম বিভাগে অসামান্য ফলাফলসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপির অধীনে পিএইচডি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে অধ্যয়নরত।

জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১০ সালে সফলতার সঙ্গে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ) তেকে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ কোর্স এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে আর্মি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে North East South Asia (NESA) Centre পরিচালিত এক্সিকিউটিভ সেমিনার কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং NESA এর গ্রাজুয়েট হিসেবে সম্মানিত হন।

বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে শফিউদ্দিন আহমেদ জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, ১৯ পদাতিক ডিভিশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিস্টিক সফর মেশন কমান্ড করেন।

এছাড়াও তিনি একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইমারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজ (বিআইআইএস) এর মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড নেশনস্ মাল্টি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা সেন্ট্রাল আফ্রিকাতে (মিনুস্কা) বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য মিশন প্রধান স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্যা সেক্রেটারি জেনারেলের (এসআরএসজি) সাইটেশন প্রাপ্ত হন।  

এছাড়াও তিনি ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে মোজাম্বিকে শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দপ্তরে সিনিয়র অপারেশনাল ও প্রশাসনিক স্টাফ অফিসারসহ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) এর চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি সেনাসদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ও বেগম নুরজাহান আহমেদ দম্পতি দুই কন্যা সন্তানের বাবা-মা।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।