ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৃষ্টি হলেই ঘরে ঢুকছে খাল খননের মাটি ও পানি 

জয়ন্ত জোয়ার্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
বৃষ্টি হলেই ঘরে ঢুকছে খাল খননের মাটি ও পানি  মাটি ধসে বসতবাড়িতে।

মাগুরা: খাল খননের মাটি বাড়ির উঠানে স্তপ করে রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খাল পাড়ের মানুষ। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই কাদা পানি গড়িয়ে বসতঘর, রান্না ঘর, গোয়াল ঘরে ঢুকে পড়ছে।

গত দুই থেকে তিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এমন ভোগান্তির চিত্র এখন মহাম্মদপুর উপজেলা বিনোদপুর চর রাড়িখালী গ্রামে।
 
রাড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা শরিফউদ্দিন মোল্লা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। বাড়ির উঠানে পাহার সমান মাটির স্তুপ কিভাবে সরাবো। কয়ডা দিন বাড়ি থেকে বের হতে পারিনে। বাড়ির সামনে হাঁটু সমান পানি ও কাদা। কিভাবে সরাবো এসব মাটি ও কাদা।
 
সম্প্রতি তার বাড়ির কূল ঘেঁষে যাওয়া খালটি পুনঃখনন করেছে সরকার। কিন্তু খননের মাটি অপসারণ না করায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষি আকমল হোসেন।

আমেনা বেগম বলেন, দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে রান্না ঘরে পানি জমে থাকায় অন্যের বাড়িতে গিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। মাটি ফেলার সময় বাধা দিলেও তারা শোনেননি। উঠানে কয়ড়া, আম, জাম, জামরুলের গাছ ছিল, তাও মাটির তলে চলে গেছে। এখন মাটি সরাতি গেলি ভাটা ওয়ালারা হুমকি-ধমকি দেচ্ছে। তাছাড়া এ মাটি আমরা কনে সরাব?
 
কাশেম মোল্লা বলেন, নিজেরা বাড়ির উঠানের মাটি সরাতে গেলে ইটভাটার মালিক এসে বাধা দেয়। বলে এই মাটি আমরা কিনে নিয়েছি। ভাটা মালিককে মাটি সরাতে বলতে তিনি বলেন, আমার যখন সময় হবে আমি তখন মাটি সরাব।  
তিনি আরো বলেন, এক কোদাল মাটি সরানো যাবে না। বিভিন্ন সময় তিনি নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
 
ভাটার মালিক এসে বলছে মাটি সরানো যাবে না। বৃষ্টি বাদলে ঘরের ভেতর পানি ঢুকছে এর মধ্যে থাকা যাচ্ছে না। এক দোয়ার ভাঙচুর করে নিয়ে গেছে সবই। এখন একটা ঘরই আছে। গরু বাছুর আছে সেসব পরের বাড়ি রেখে এসেছি। এখন মাটি সরিয়ে ঘর সুন্দর করে তুলবো সেও তুলতে দেবে না। ভাটার মালিক বলেন মাটি আমার কেনা আমার ইচ্ছা মত সরাবো।
 
এই খালের মাটি নিয়ে একই রকম সংকটের মধ্যে আছেন তার প্রতিবেশী বছিরণ নেছা, নান্নু মিয়া, রুবেল রানা। কাওড়া গ্রামের রোজিনা খাতুনসহ অসংখ্য মানুষ। কারও বাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, কারও বসতবাড়ির দেয়াল দখল হয়ে আছে। এমন অবস্থায় নিজেরা মাটি সরাতে গেলেও বিভিন্ন পক্ষের বাধার মুখে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি মহম্মদপুর উপজেলার এমডি-১ খাল পুনঃখননের কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর নবগঙ্গা নদী থেকে শুরু করে চুড়াগাতি হয়ে মধুমতি নদীতে মিলিত হয়েছে খালটি। প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও এর মধ্যেই কাজের ৯০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে।

প্রকল্প সংশিষ্ট স্থানীয় ঠিকাদাদের একজন আরিফুর রহমান বলেন, চুক্তির মধ্যে মাটি অপসারণের কোনো শর্ত ছিলো না। পাউবো মাটি রাখার জন্য যেসব জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানেই ফেলা হয়েছে। এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা যথাসম্ভব মানুষের ক্ষতি এড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেছেন ভরা বর্ষার আগে মাটি সরাতে না পারলে তা ধুয়ে হয় আবার খালে নামবে, না হয় রাস্তায় বসতবাড়ি, ফসলি জমি নষ্ট করবে।
 বিনোদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান বলেন, অনেক মানুষের জমি নষ্ট হয়েছে। মানুষের বাড়ি ও রাস্তার ওপর যত্রতত্র মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। এসব মাটি তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হোক।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, খাল থেকে উত্তোলিত মাটির পরিমাণ পাঁচ লাখ ঘনমিটার জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী এসব জনকল্যামূলক কাজে বা প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা করে বিক্রির নিয়ম রয়েছে।

এ বিষয়ে মাগুরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে খননের মাটি ও এটি বিক্রি করে অজিত টাকার হিসাব প্রকল্প পরিচালকের কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী এ মাটি ১০ টাকা ঘনমিটার দরে বিক্রি করা যাবে। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে শিগরিই এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম বলেন, এই মাটি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এমন অসংখ্য অভিযোগ আমার দপ্তরে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো এ পর্যন্ত পাউবো এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।  এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পাউবোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।