ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একদিনেই ঢাকায় ফিরেছেন ৪ লাখ মানুষ, ১২ দিনে গেছেন ১ কোটি!

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২১
একদিনেই ঢাকায় ফিরেছেন ৪ লাখ মানুষ, ১২ দিনে গেছেন ১ কোটি!

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে ঈদের ছুটিতে কর্মজীবী মানুষের গ্রামের বাড়ি যাওয়া নিষেধ ছিল। বন্ধ ছিল লঞ্চ, ট্রেন ও দূরপাল্লার বাস।

কিন্তু ১২ দিনে ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। আর ঈদের ছুটি শেষে একদিনই ঢাকায় ফিরেছেন চার লাখের বেশি মানুষ।

ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ঢাকায় ফিরে আসা মোবাইল ফোনের সিমের হিসেবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ হিসেবে একজন সিম ব্যবহারকারীকে ইউনিক ব্যবহারকারী হিসেবে ধরা হয়েছে।

গত ১৪ মে শুক্রবার ঈদুল ফিতর উদযাপনের আগে এবং পরে শনিবার (১৫ মে) মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ফিরতে দেখা গেছে। ট্রাক, পিকআপভ্যান, মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেটকারে গাদাগাদি করে মানুষকে যাওয়া-আসা করতে দেখা গেছে।

গণপরিবহন বন্ধে মানুষের এরকম গাদাগাদি করে বাড়ি যাওয়া এবং আসা করোনা সংক্রমণের জন্য মারাত্মক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ আশঙ্কায় ‘লকডাউন’ বেড়েছে এক সপ্তাহ। এদিকে, ঈদ উপলক্ষে যারা বাড়ি গেছেন তাদের ১৪ দিন গ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ৪ থেকে ১৫ মে ঢাকা থেকে চলে যাওয়া এবং শুধু ১৫ মে ঢাকায় চলে আসার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শুধু ১৫ মে অর্থাৎ ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার আগের দিন শনিবার ঢাকায় ফিরেছেন চার লাখ ১২ হাজার ৭৬৩ সিমের মালিক। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের দুই লাখ ৭৭ হাজার ৯৬ জন, রবির ছয় হাজার ১৪৩ জন, বাংলালিংকের এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৯৬ এবং টেলিটকের ৪০ হাজার ৩২৮ সিম ব্যবহারকারী রয়েছেন।

এরআগে ৪ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত নয় লাখ ২১ হাজার ৬৩৫ জন, ১৪ মে সাত লাখ ৯৯ হাজার ৩৮০ জন এবং ১৫ মে ঢাকা ছেড়েছেন আট লাখ ২৪ হাজার ৬৮২ জন সিমের মালিক। মোট ১২ দিনে ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটি ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৬৯৭ জন।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ফেসবুকে এক স্ট্যাটোসে জানান, ‘৪ থেকে ১৫ মে অবধি ঢাকা ছেড়েছে তার পরিমাণ কোটি অতিক্রম করেছে। একইসঙ্গে ১৫ মে কতটা সিম ঢাকা ফেরত এলা তার পরিমাণও দিলাম। আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি ঈদের নামে কতজন কী নিয়ে বাড়ি গেছেন আর কতজন কী নিয়ে ফেরত আসছেন তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। আল্লাহ রহম করো। ’

স্বাস্থ্যবিদ এবং জনস্বাস্থ্যবিদরা ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ফিরে আসায় করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা বাড়ি গিয়েছেন, তাদের অফিস খোলা না হলে ১৪ দিন পর ঢাকায় ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রোববার (১৬ মে) স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, যারা বাড়িতে গেছেন, এখনও অফিস খোলেনি, স্কুল-কলেজে দেরি করে ফিরলেও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, তারা অন্তত সাত থেকে ১৪ দিন দেরি করে ঢাকায় ফিরবেন।

‘সরকারের পরামর্শ ছিল আমরা যেন এবারের ঈদে নিজ নিজ অবস্থান ছেড়ে বাইরে না যাই। কিন্তু আমরা দেখেছি, বড় সংখ্যক মানুষ এ পরামর্শ উপেক্ষা করেও নানাভাবে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেছেন। সেখানে কিছু মর্মান্তিক দৃশ্যও দেখেছি। ’

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, যাদের এরই মধ্যে  উপসর্গ দেখা গেছে, তারা কাছের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতালে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেবেন। ফিরে আসার সময় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

ঈদে মানুষকে কর্মস্থলে রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল জানিয়েছে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধ উপেক্ষা করে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় ঈদের সময়ও ‘লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে।

আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে ২৩ মে পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ ‘লকডাউন’ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদে যাতায়াতের কী প্রভাব তা ২২ মে’র দিকে বোঝা যাবে। আমরা সে কারণে গণপরিবহনও বন্ধ রেখেছিলাম। মানুষকে নিরাপদ রাখতে সরকারের সব উদ্যোগ, এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২১
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।