ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীর পদ্মাপাড় ছিল মানুষের পদচারণায় মুখর

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
রাজশাহীর পদ্মাপাড় ছিল মানুষের পদচারণায় মুখর

রাজশাহী: তীব্র রৌদ্রের প্রখরতায় কেটেছে তপ্ত সকাল। এক পশলা বৃষ্টিতে কেটেছে জৈষ্ঠ্যের দুপুর।

কোলাহলে ভরা নগরটা বড্ড শান্ত। করোনায় যেন বিমর্ষ হয়ে উঠেছে প্রকৃতিও। স্বাস্থ্যবিধির শেকলে বাঁধা পড়েছে চারিদিক। কিন্তু তাতে কী, এখনও দখিনে কলকলিয়ে বইছে পদ্মা।

পানি অনেকটা শুকিয়ে গেলেও নির্মল বিনোদনের খোঁজে তাই সেই পদ্মাপাড়েই নেমেছে জনস্রোত। কারো মুখে মাস্ক আছে কারও নেই। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন আবার কেউ মানছেন না। কিন্তু সবাই পদ্মার চরে নেমে মরা পদ্মার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন এ করোনাকালেও।

কারণ এ পদ্মা নদীকে ঘিরেই রাজশাহীর মানুষের আবেগ, অনুরাগ, বিনোদন আর ভালোবাসার টান। যেন বিনোদনের সব সুর মিলেছে পদ্মা নদীর মোহনাতেই। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পদ্মা নদীর কূলে থাকছে বিনোদন পিপাসুদের ভিড়। বর্ষায় উজান থেকে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে এবারের টইটম্বুর হয়ে ওঠে এই পদ্মা। নদীর উত্তাল স্রোত আছড়ে পড়ে পদ্মার পাড়ে। মাঝনদীর জলরাশিতে খেলতে থাকে ঢেউ। কিন্তু এখন এসবের কিছুই নেই। তারপরও থেমে নেই মানুষ। ঈদের ছুটিতে তাই সকাল-বিকেল প্রকৃতির টানে সবাই ছুটে যাচ্ছেন পদ্মারপাড়ে। মুখের মাস্ক খুলে নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।

ভরা পদ্মার প্রতি মানুষের যেমন টান থাকে, তেমনই আছে এখন। করোনার ভয়ে এতটুকুও হেরফের হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দুপুরের বৃষ্টির পর বিকেল গড়াতেই তাই আবারও জনসমাহারে ভরে উঠেছে স্রোতস্বিনী পদ্মা নদীর পাড়।

কচিকাঁচা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠে ছিল পদ্মা তীরবর্তী গোটা শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা। শহরের পঞ্চবটি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ ছুঁয়ে থাকা পদ্মারপাড়ই সবার জন্য হয়ে উঠেছে বিনোদনের সেরা ঠিকানা।

বৃষ্টি হওয়ার ভ্যাপসা গরম কেটেছে। নেমেছে তাপমাত্রা। এমন আবহাওয়ায় তাই সবাই ঘুরে বেড়িয়েছেন পদ্মার পাড়ে। ছোটরা ঈদের খুশিতে হৈ চৈ করেছে। তরুণ-তরুণীরা ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় উঠে ওপারে পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়িচ্ছেন। যদিও সারা বছর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে রাজশাহীর পদ্মার তীর।

এর ওপর এখন যোগ হয়েছে ঈদের বাড়তি আনন্দ। ঈদের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। তাই জনসমাগম ছিল পদ্মাপাড়ে। ঘরবন্দি মানুষগুলো অখণ্ড অবসর উদযাপনে যায় পদ্মাপাড়ে। মাঝ নদীতে পানি আছে। আছে স্রোতও। সেই স্রোতের বয়ে চলার মাঝেই আটপৌরে জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলছেন রোগশোক আর ক্লান্তিতে থাকা মানুষজন। মৃত প্রায় নদীর স্রোতের শব্দে খুঁজছেন মানসিক প্রশান্তি।

মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে সব জায়গাতেই এখন মানুষের জটলা। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় এখনও সবার ওপরেই রয়েছে পদ্মাপাড়। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান পছন্দ পদ্মা। তাই করোনা আতঙ্কের মধ্যেও বিনোদন পিপাসুরা ভিড় করছিল সেখানে। এতে পদ্মাপাড়ে বাদাম, চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের সব দোকানগুলোর ব্যবসাও চলছে। কর্মস্থল শুরু হলেও বিকেলে ছুটির আমেজ বিরাজ করে সেখানে।

মহানগরীর সুজানগর এলাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসা নাঈম, আশরাফ ও মাসুদ বলেন, করোনার কারণে বর্তমানে সব বিনোদনকেন্দ্রই বন্ধ। গতবার কোরবানির ঈদের দিন থেকে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়েছিল। এবার দেওয়া হয়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত পরিবেশ, মুক্ত বাতাস আর নির্মল বিনোদনের জন্য পদ্মার জুড়ি নেই। এজন্য বিকেলে তারা পদ্মার তীরে বেড়াতে এসেছেন।

পদ্মাপাড়ে চটপটি বিক্রি করেন হাসান আলী। তিনি বলেন, করোনার কারণে এতদিন বিক্রি প্রায় বন্ধই ছিল। কিন্তু ঈদের ছুটিতে মানুষ আবারও নদীর তীরে বেড়াতে আসছেন। এ সুবাদে টুকটাক করে বিক্রিও শুরু হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তার মতো অনেক ব্যবসায়ীই এখন পেয়ারা, আমসহ বিভিন্ন পদের আচার, ফুচকা-চটপটি ইত্যাদি মুখোরোচক খাবার বিক্রি করছেন। অনেকে তা কিনেও খাচ্ছেন।

এতে তাদের কিছুটা নগদ আয়ও হচ্ছে। টুকটাক বিক্রি না হলে করোনায় তার পরিবারকে ঈদে না খেয়ে থাকতে হতো বলেও মন্তব্য করেন- চটপটি বিক্রেতা হাসান আলী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।