ঢাকা: দূরপাল্লার বাস বন্ধ, সেসঙ্গে টার্মিনালগুলোতে বন্ধ বাস কাউন্টারও। তবুও ঘরমুখী মানুষের আনাগোনা রয়েছে টার্মিনালে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন যুবক এসে জানতে চাইছে কোথায় যাবেন? তাদের তত্ত্বাবধানেই এসব কাউন্টারের সামনে থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে যাচ্ছে মাইক্রোবাস। জায়গাভেদে সেসব মাইক্রোবাসের যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হবে ২ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে, নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রী হলেই ফোন করে মাইক্রোবাস নিয়ে আসা হবে। এর আগে আসন নিশ্চিত করতে অগ্রিম দিতে হচ্ছে ১শ টাকা।
বুধবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুর-গাবতলী বাস কাউন্টার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ঘরমুখী মানুষের অপেক্ষাও ছিলো চোখে পড়ার মতোই। এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস বন্ধ জেনেও ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে পথে বেরিয়েছেন অনেকেই। কিভাবে যাবেন সেটি স্পষ্ট নয়, তারা জানেন শুধু বাড়ি যাবেন। তাই তাৎক্ষণিক যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই রওয়ানা দিচ্ছেন বাড়ির দিকে।
কল্যাণপুর বাস কাউন্টারে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মোজাম্মেল নামে এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে তাই শেষ মুহূর্তে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন তিনি।
মোজাম্মেল নিজ থেকে এসেই জানতে চাইলেন ভাই কোথায় যাবেন? এর কারণ তিনি বাড়ি ফিরতে প্রাইভেটকার ঠিক করতে চাচ্ছেন। কাউন্টার বন্ধ থাকলেও এখানকার লোকজন প্রয়োজনমতো প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ম্যানেজ করে দিতে পারছেন। কিন্তু খরচ ভাগাভাগি করতে নিজ থেকেই সঙ্গী খুঁজছেন।
তিনি বলেন, বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন গ্রামে থাকেন। বছরে দুইটি ঈদেই সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। বাড়ি না গেলে ঢাকায় একা একা ঈদ হয় নাকি? সবারই একটা ইচ্ছা থাকে। গাড়ি বন্ধ তারপরেও যেভাবেই হোক বাড়ি যেতেই হবে। অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এত দীর্ঘপথ যাত্রায় করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় যে বাস চলছে, এখানে আক্রান্ত হচ্ছে না মানুষ? বাস বন্ধ, মানুষ যে ট্রাকে করে যাচ্ছে সেখানেও ঝুঁকি আরো বাড়তেছে। যারা যাওয়ার তারা যাবেই, মাঝখানে বাস বন্ধ করে মানুষের ভোগান্তি বাড়ানোর পাশাপাশি খরচও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
কল্যাণপুরেই কয়েকজন যাত্রী দেখলেই জিজ্ঞাসা করছেন কোথায় যাবেন? তারা প্রয়োজনমতো মাইক্রোবাস ঠিক করে দিতে পারছেন। কথা বলার সময় রাজশাহীর কযেকজন যাত্রী ঠিক হয়েছে, ১৫ জন পূর্ণ হলেই মাইক্রোবাস ছাড়বে। এজন্য জনপ্রতিকে ভাড়া দিতে গুনতে হবে ২ হাজার ৫শ টাকা আর বুকিং মানি হিসাবে দিতে হবে ১শ টাকা।
বুকিংমানি রাখার কারণ জানতে চাইলে নয়ন নামে একজন বলেন, কেউ যাবে বললো, কিন্তু মাইক্রোবাস আসার পর যদি তাকে আর না পাওয়া যায়। সেজন্য সিট কনফার্ম করতে ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে।
এদিকে গাবতলীর আমিনবাজার এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থেকে বাসে করে গাবতলী আসছেন ঘরমুখো লোকজন। এরপর তারা পায়ে হেঁটেই আমিনবাজার ব্রিজ পার হচ্ছেন। ওপারে গিয়ে ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিচ্ছেন সবাই।
যশোর যেতে রওয়ানা দিয়েছেন রাকিব নামে একজন। তিনি আপাতত ফেরিঘাট পর্যন্ত যেতে ১ হাজার টাকায় একটি মোটরসাইকেল ঠিক করেছেন। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে আবার অন্য কোনো উপায়ে বাকি পথ যাবেন তিনি।
এত দীর্ঘপথ মোটরসাইকেলে যেতে ঝুঁকি থাকে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ি যেতেই হবে যেভাবেই হোক। মোটরসাইকেল বাদে বরং মাইক্রোবাস বা অন্য যানবাহনে করোনার ঝুঁকি বেশি হবে। এছাড়া পিকআপ-মাইক্রোবাসে করে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভাড়া আদায় করলেও সেদিকে খেয়াল নেই কারো। যেন বাড়ি ফেরাই সবার শেষ কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
পিএম/এএটি