ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টিকা কূটনীতিতে তৎপর সরকার

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
টিকা কূটনীতিতে তৎপর সরকার ফাইল ফটো

ঢাকা: দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় টিকা কূটনীতিতে নতুন করে তৎপর হয়েছে সরকার। ভারত থেকে টিকা আসতে দেরি হওয়ায় ঝুঁকছে বিকল্প দেশগুলোর দিকে।

বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, গ্যাভি- কোভ্যাক্স উদ্যোগ, চীনের উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকা আনতে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে সরকার।

সূত্র জানায়, করোনার প্রথম দফার শুরুতে টিকা আনতে না পারলেও পরবর্তীসময়ে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা টিকা আনতে সক্ষম হয় সরকার। ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি টিকা পাবে বাংলাদেশ। তবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পেয়েছে চুক্তির ৭০ লাখ টিকা। দুই দেশের সরকারের মধ্যস্থতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো এই টিকা আনছে।  

এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ আরো ৩৩ লাখ টিকা পেয়েছে। তবে ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সে দেশের অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশেও টিকা আসতে দেরি হচ্ছে।

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বাংলাদেশেও টিকা জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে টিকা আসতে দেরি হওয়ায় বাংলাদেশ বিকল্প দেশের দিকে ঝুঁকছে। চীন-রাশিয়া, গ্যাভি-কোভ্যাক্সের সঙ্গে টিকা আনতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।


রাশিয়ার সঙ্গে টিকা আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। ইতোমধ্যে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে সমঝোতা চুক্তিও সই হয়েছে। এখন রাশিয়া- বাংলাদেশ যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে যাবে। বাংলাদেশেরই কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে এই টিকা উৎপাদনের কাজ দেওয়া হবে। কোম্পানিটি রাশিয়ার প্রযুক্তি নিয়ে টিকা উৎপাদন করবে। তবে সেই কোম্পানিকে টিকার ফর্মুলা গোপন রাখতে হবে। এছাড়া রাশিয়া থেকে স্পুটনিক-৫ টিকা আমদানির বিষয়েও সরকার তৎপর।

চীনের সিনোভ্যাক টিকা আনার বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এখনই চীনা টিকা পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে চীন। তারা জানিয়েছে, আগে থেকে যেসব দেশ সিনোভ্যাক টিকার জন্য বুকিং দিয়েছে, তাদের দেওয়ার পর বাংলাদেশ টিকা পাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জুনের পর চীন টিকা সরবরাহ করবে। তবে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশকে ৫-৬ লাখ সিনোভ্যাক উপহার দেবে।

এদিকে টিকার জন্য চীনের নেতৃত্বে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। ছয়টি দেশের এই প্ল্যাটফর্মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া’। টিকার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এতে আরো যোগ দিয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।

টিকা সরবরাহের লক্ষ্যে বৈশ্বিক জোট গ্যাভি-কোভ্যাক্সের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

গ্যাভি-কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে আগামী মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ১ কোটি ৯ লাখ টিকা পাওয়ার কথা। এছাড়াও ফাইজারের টিকা আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ভারতের টিকার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানান, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের পাশেও যথাসাধ্যভাবে দাঁড়াতে চাই। তবে টিকার চাহিদা ব্যাপক, সেই অনুযায়ী সরবরাহ কম। আমাদের উৎপাদন সীমাবদ্ধতা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও অন্য দায়বদ্ধতাসাপেক্ষে সবার প্রয়োজন মেটাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

টিকা আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছি। ভারত ছাড়াও চীন, রাশিয়ার সঙ্গে টিকা আনার জন্য আলোচনা করছি। আমরা ইতোমধ্যেই টিকা উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছি। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করা হবে। চীনের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
টিআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।