ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় অধরা আসামিরা, ক্ষোভ মোরশেদের স্ত্রীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২১
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় অধরা আসামিরা, ক্ষোভ মোরশেদের স্ত্রীর

ঢাকা: চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনার আটদিন পার হলেও অধরা আসামিরা। নিষ্ক্রিয় প্রশাসন।

প্ররোচণাকারী জাবেদ ইকবাল, পারভেজ ইকবাল, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীসহ প্রভাবশালীরা গ্রেফতার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ফের বিচার চেয়েছেন মোরশেদের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্ররোচণকারীদের নাম জানানো এবং মামলা করার পরও পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ এই সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী। সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিচার চেয়ে আর্জি জানাতে গিয়ে বারবার চোখ ভিজেছে তার।  

মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেলের নামে মামলা করলেও মোরশেদের স্ত্রীর অভিযোগ, এ ঘটনায় জড়িত জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র শারুন চৌধুরী।

আরো পড়ুন>>গণমাধ্যমের রিপোর্টকে ‘কাগুজে বাঘ’ বললেন শারুন

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ঘটনার আটদিন পর তিনি প্রভাবশালীদের ক্ষমতার জোর ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলে বলেন, সেদিন নিচে যে গাড়ি বসা ছিল সে গাড়িটার নেমপ্লেট ছিল না। ওই গাড়ির ভিতরে শারুন বসা ছিলেন। সেদিন ভয় দেখানো, টাকা দেওয়ার ডেট, ফোনকল- সব মিলিয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

‘ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে আমি মামলায় তাদের নামটাই দিয়েছি। এই শারুন, বাচ্চু এদেরকে তো ওরা কন্ট্রাক্টে নিয়েছে। ’

মোরশেদের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহানের অভিযোগ, হুইপপুত্র শারুন, আরশাদ আর জাবেদ গং মিলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।  

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কানে দেওয়া হচ্ছে ওরা অনেক উপর মহল পর্যন্ত যাচ্ছে। তোলপাড় করে ফেলছে যেন ওরা গ্রেফতার না হয়। আমি এখন আল্লাহর দরবারে বিচার ছেড়ে দিলাম। আর কি করবো বলেন। আমি বারবার জাবেদ, আরশাদ এদের নাম মোরশেদের মুখে শুনেছি।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,পরস্পরবিরোধী অনেক বক্তব্য এসসেছে। আমরা সতর্ককতার সঙ্গে এগোতে চাচ্ছি যেন কোনো ভুল না হয়। তদন্ত অব্যাহত আছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। যখন ক্রস চেক করবো আশাকরি সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আর মামলা হলেই যে কেউ গ্রেফতার হবে এমন কোনো কথা নেই।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। কেউ যদি তদন্তের মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয় অবশ্যই তাকে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত বলে মনে করি। সে সরকারদলীয় হোক বা বিরোধীদলীয় হোক।

এর আগে রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহনের নেপথ্যে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ইশরাত।

আরো পড়ুন>>জাবেদ ইকবাল গংয়ের মানসিক নির্যাতনে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা!

সেখানে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যায় সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন, আমাকে বেঁধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল। আমার ও মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। সেটা এখনো পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। ২০১৯ সালে বাসায় হামলা হওয়ার মামলা করা হয়।  তাদের কাছে জমা থাকা চেক নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। মামলা করে ক্ষান্ত হননি। প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও আমাকে নির্যাতন করেন। আমাদের বাসায় আক্রমণ, মেয়েকে অপহরণ, আমার স্বামীকে খুন করবে বলে অনেকবার প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়েছে।  

আরো পড়ুন>>রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা

তিনি বলেন, পাওনার অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার পরও জামানত হিসেবে দেওয়া চেকগুলো ফেরত না দিয়ে আপস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীন অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।  

ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে চিরমুক্তি পেতে স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। হুমকিদাতাদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে আমরা চরম অসহায়।  আমি ও মেয়ের জীবন ও মানইজ্জত নিয়ে চরম শঙ্কিত রয়েছি। প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে স্বামীর আত্মহননের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর আত্মহত্যার প্ররোচণাকারীদের বিচার দাবি করছি।  

বুধবার (৭ এপ্রিল) ভোরে নগরের পাচঁলাইশ থানার মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নাহার ভবনের ৬ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার  ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চারজনকে আসামি করে স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২১
টিসি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।