যশোর: যশোরে দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে ১৬ কোটি টাকার বেশি নগদ বিতরণ করা হবে। আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এ টাকা দিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, নগদ এ অর্থ সহায়তার উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত অনুসরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের তালিকায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অতি দরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ তালিকায় কমপক্ষে শতকরা ৭০ শতাংশ নারীর অর্ন্তভুক্তিসহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্য যাতে ভিজিএফ কার্ডের বরাদ্দ না পায় সেটিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ সহায়তা বিতরণে অনিয়ম রোধে এরকম বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি যাতে না হয় সেজন্য তৎপর থাকবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি থাকবে।
যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, রমজান উপলক্ষে যশোরের আট উপজেলায় ২ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিয়নের দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর এসব ইউনিয়নের দরিদ্র ও দুস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করে পরিবার বা ব্যক্তি প্রতি নগদ ৫০০ টাকা করে বিতরণ করা হবে।
সূত্রে আরও জানায়, এ পরিমাণ নগদ অর্থের মধ্যে যশোর সদর উপজেলা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মণিরামপুরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কেশবপুরে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শার্শায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ঝিকরগাছায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, চৌগাছায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাঘারপাড়ায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অভয়নগরে ২০ লাখ টাকা।
এদিকে যশোর, কেশবপুর, নওয়াপাড়া, বেনাপোল ও মণিরামপুর পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝিকরগাছা ও চৌগাছা পৌরসভা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ও বাঘারপাড়া পৌরসভা ১ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে।
এছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যশোরের আট উপজেলায় নগদ অর্থ সহায়তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা। এসব এলাকায় দুস্থ ও দারিদ্র পরিবারের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা জনপ্রতি ৪৫০ টাকা করে অর্থ সহায়তা পাবেন। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৫০ টাকা। আর ঝিকরগাছায় ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা, চৌগাছায় ২ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা, অভয়নগরে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৫০ টাকা, মণিরামপুরে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার ৯০০ টাকা, কেশবপুরে ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা, শার্শায় ৯০ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা ও বাঘারপাড়ায় ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫০ টাকা।
এদিকে যশোর, নওয়াপাড়া, কেশবপুর, মণিরামপুর ও বেনাপোল পৌরসভার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়া ঝিকরগাছা ও চৌগাছা পৌরসভায় ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫০ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাঘারপাড়া পৌরসভায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনার আলোকে অর্থ সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে রমজান উপলক্ষে বরাদ্দকৃত টাকা বিতরণের সরকারি নির্দেশ রয়েছে। আর ঈদুল ফিতরের উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করে আগামী ১ মের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কে এম মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, উপকারভোগী বাছাইয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ ও শর্ত মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত ও যোগ্যদের কাছে সরকারের এ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বরাদ্দকৃত এ ভিজিএফ’র অর্থ বিতরণও করা হয়। ফলে অনিয়ম হবার সুযোগ কম। তারপরও এক্ষেত্রে এবার যাতে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয় সেজন্য প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২১
ইউজি/আরআইএস
