ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘করোনায় না, আমরা ক্ষুধায় মারা যাবো’

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
‘করোনায় না, আমরা ক্ষুধায় মারা যাবো’

ঢাকা: ‘করোনায় মারা না গেলেও, ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমরা না খেয়েই মারা যাবো। আমরা গরিব মানুষ, তাই আমাদের কাছে পেটের চিন্তাই বড় চিন্তা।


 
সোমবার (১২ এপ্রিল) লকডাউনে রিকশা চালানো বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার হারুনুর রশিদ নামে একজন রিকশাচালক।
 
হারুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। তিনি রায়ের বাজারে ইনসার আলির গ্যারেজে থাকেন। ৫৯ বছর বয়সী এই রিকশাচালকের পরিবারের সদস্য চারজন। তারা সবাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন, শুধু জীবিকার তাগিদেই এই বয়সেও হারুনকে পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকতে হয়।  
 
লকডাউনে রিকশা বন্ধ থাকলে সংসার চালাতে কোনো সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনে আমাদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। করোনায় মারা না গেলেও আমরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় না খেয়ে মারা যাবো। সরকার লকডাউন দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থাতো করবে। আমরা পেটের দায়ে রাস্তায় নামি। তাই সরকার যেন আমাদের দিকে খেয়াল রাখে।

চাঁদপুরের বিল্লাল হোসেন ঢাকায় থাকেন মিরপুর-১০ নম্বরে। স্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে তিনি পরিবার চালান।
 
লকডাউনে সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ থাকলে সংসার কীভাবে চালাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মতো গরিব মানুষের কথা কেউ ভাবে না। আমাদেরতো আর ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা নেই যে কাজ কাম না থাকলে সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাবো। একদিন গাড়ি বন্ধ রাখলে বাড়িতে চুলা জ্বলে না, ধার-কর্জ করে চলতে হয়। এই লকডাউন কয়দিন থাকবে, কে জানে। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
 
আজিমপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর যাতায়াত করা বিকাশ পরিবহনে দিনে ৫শ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন শাহাদত হোসেন। তার কাছে লকডাউনে কীভাবে চলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন বাসের হেলপারি করে ৫শ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে নিজে চলি, আর বাড়িতে টাকা পাঠাই। বাস না চললে আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে, তাই আমাদের সংসার চালানোও কঠিন হয়ে যাবে।  
 
ভাটারা এলাকায় মুচির কাজ করেন বেরাইদ নিবাসী গৌরাঙ্গ দাস। তিনি বলেন, এবারের লকডাউন শুনছি অনেক কঠিন হবে। কাউকে বাসা থেকে বেড় হতে দেবে না। আমার এই কাজের উপরে ছয়জনের সংসার চলে। কাজ বন্ধ থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এই করোনা যেন তাড়াতাড়ি দেশ থেকে বিদায় হয়, এই দোয়াই করি।
 
একই এলাকায় মুচির কাজ করেন নিখিল দাস। লকডাউন সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের লকডাউনের শুনছি সবকিছুই সরকার বন্ধ করে দেবে। আমরাও কাজ করতে পারবো না। একদিন কাজ না করলে আমাদের মুখে খাবার জোটে না, তাই লকডাউনে আমার মতো কম আয়ের লোকদের বেশি সমস্যা হবে। লকডাউনে আমাদের কাজ বন্ধ থাকলে, আমরা কীভাবে সংসার চালাবো সেই চিন্তাতেই আমাদের জীবন এখনই প্রায় শেষ।
 
শুধু হারুনুর রশিদ, বিল্লাল হোসেন, শাহাদত কিংবা গৌরাঙ্গ দাস নয়, অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনে এসব দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের সংসার কীভাবে চলবে, সেটাই এখন তাদের বড় চিন্তার বিষয়। একই সঙ্গে দেশ থেকে দ্রুত যেন এই করোনা মহামারি বিদায় হয়, সবকিছুই যেন আবারও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে সেই কামনাও করেন তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩ ২০২১
আরকেআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।