ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লকডাউনে কাজ বন্ধ, ঢাকায় থাকলে খামু কী?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
লকডাউনে কাজ বন্ধ, ঢাকায় থাকলে খামু কী?

ঢাকা: ‘লকডাউন শুরু হইলে কেউ বাড়ির বাইরে যাইতে পারবো না। আমরা রাজমিস্ত্রীর কাজ করি।

মালিককে কাজ বন্ধ করইরা দিছে। এখন কাজ বন্ধ, ইনকাম নাই, ঢাকায় থাকলে খামু কী? তাই কষ্ট কইরা হইলেও বাড়িতে যামু। ক্ষেতে কামলা দিলেও পেটের ভাত জোগাবার পারমু’।

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে সোহাগ আলী এমনটাই বলছিলেন। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে রাজমিস্ত্রী কাজ করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি। এই লকডাউনে দোকানপাট, শপিংমলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তাই লকডাউনের আগেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন রাজমিস্ত্রী সোহাগ আলী। তার সঙ্গে আরও একজন রয়েছেন মো. কাওসার। সোহাগ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বনশ্রী এলাকায় একটি বাড়ির নির্মাণ কাজ করছিলাম। সেখানেই থাকা-খাওয়া। লকডাউনে কাজ বন্ধ। অনেক শ্রমিক চলে গেছে। এখন আমরা সেখানে থাকতে পারছি না। আর ঢাকায় এই লকডাউনে কী করবো। কোনো কাজ নেই। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। বাড়ি গিয়ে অন্যের জমিতে কামলা খাটলেও পেটের ভাত যোগাতে পারবো।

তিনি বলেন, এদিকে গাড়ি বন্ধ। এখন বনশ্রী থেকে লোকাল বাসে আব্দুল্লাপুর নেমেছি। এখান থেকে আরেক গাড়িতে (বাসে) যাবো গাজীপুর। সেখান থেকে অন্য কোনো বাস নয়তো ট্রাকে করে চলে যাবো বাড়ি। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

শুধু সোহাগ আলী নয়, তার মত নিম্নআয়ের শত শত মানুষ আসন্ন লকডাউনের কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। পিঠে, ঘাড়ে, ও মাথায় ব্যাগের বোঝা বয়ে আব্দুল্লাপুর এলাকায় এসে ভিড় করছেন যাত্রীরা।

এদিকে আব্দুল্লাহপুরে দুর্পাল্লার সব বাস কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। তবে, কয়েকটি কাউন্টারের গোপনে বাসের টিকেট বিক্রি করতেও দেখা গেছে। এদিকে সড়কের পাশে, গ্রামে যাও যাত্রীদের ভিড় থাকতে দেখা গেছে।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরি করেন তামিম। লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকবে। তাই নিজের গ্রামের বাড়ি সিলেট চলে যাচ্ছেন তিনি। তবে, তিনিও যাচ্ছেন ভেঙে ভেঙে। তামিম বলেন, প্রথমে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর হয়ে নরসিংদী যাব। এরপর সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে সিলেট যাব। যেভাবেই হোক আজ আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।

রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফেরা শত শত মানুষের ভিড়। এদিকে হাউজবিল্ডিং থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট। এতেও বাড়ি ফেরা মানুষজন বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যাচ্ছেন। সেখান থেকে অনেকেই আশুলিয়া সাবার বাইপাইলের গাড়িতে উঠছেন। আবার অনেকেই টঙ্গী পার হয়ে গাজীপুর হয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে আব্দুল্লাহপুরে এসএন পরিবহন, সোনালী পরিবহন ও একতা পরিবহনের কাউন্টারে বসে গোপনে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করছেন। পরিবহন বন্ধ থাকার পরও কেন টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও ওই কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা লোকজন কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।