ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা: বান্দরবানে ম্লান ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের বৈসাবি উদযাপন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
করোনা: বান্দরবানে ম্লান ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের বৈসাবি উদযাপন ক্রেতাশূন্য দোকান

বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হলো বৈসাবি উদযাপন। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে নানা আয়োজনে কয়েকদিনব্যাপী জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হয় নানা অনুষ্ঠান।

তবে করোনা আর লকডাউনের কারণে গতবছরের মত এবারেও ম্লান হয়ে গেছে এই বৈসাবি উদযাপন।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় বলে বিজু, মারমা-রাখাইনরা বলে সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বলে বিষু আর এসব কিছুর সংমিশ্রণে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করার উৎসবের নামই হলো বৈসাবি।  

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পহেলা বৈশাখ বাঙালিরা এক নিয়মে পালন করলেও পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পালন করা হয় ভিন্নভাবে। কয়েকদিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজনে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের পাশাপাশি, জলকেলি, পিঠা তৈরি, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলায় উৎসবে রঙিন হয়ে ওঠে বান্দরবান পার্বত্য জেলা। বান্দরবানের এমন জমকালো উৎসবে যোগ দিতে প্রতিবছরই বেচা বিক্রি বাড়ে স্থানীয় দোকানগুলোতে। নতুন বছরের আগমনকে বরণ করতে তাই বাঙালিদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনগণ কিনে নেয় নতুন নতুন কাপড়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি ধর্মীয় নানান সামগ্রী। তবে করোনার প্রভাব আর লকডাউনে বান্দরবানের বেশিরভাগ দোকান এবার ক্রেতাশুন্য।  

বান্দরবানের মধ্যমপাড়া হ্লা হ্লা মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. ফরহাদ বলেন, করোনা আর লকডাউনে আমাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। গতবছর এসময়টা লকডাউন ছিল আর এবার করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আবার লকডাউন চলছে আর এতে মার্কেটে ক্রেতা কম হওয়ায় বেচাবিক্রি কম।

বান্দরবানের শৈ এন্ড ওয়া বার্মিজ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. হেলাল জানান, আমরা  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব উপলক্ষে কয়েক লক্ষাধিক টাকার নতুন মালামাল দোকানে বিক্রির জন্য মজুদ করেছি। মনে করেছিলাম গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও এবারের উৎসবে বিক্রি করে সামলে নেব। তবে করোনায় আমাদের সব শেষ। বেচা বিক্রি কম কিন্তু ঋণের টাকা পরিষদ করতে হচ্ছে প্রতিদিনই।  

এদিকে গেল বছরের মত এবারও পরিবার পরিজন নিয়ে বৈসাবির জমকালো আয়োজন উদযাপন করতে না পারায় হতাশ ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনসাধারণ। বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান য়ইসা প্রু মারমা বলেন, আমরা নতুন বছর উপলক্ষে গতবারের মত এবারও মজা করতে পারবো না কেননা কোভিড-১৯ সারা পৃথিবীতে ২য় ডেউ ছড়াচ্ছে আর তার প্রভাব থেকে আমরা কেউ মুক্ত নয়। বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান য়ইসা প্রু মারমা আরো বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ হলে হয়তো আগামী বছর জাঁকজমকভাবে আমরা আমাদের এই সাংগ্রাই উৎসব ব্যাপক আয়োজনে উদযাপন করতে পারবো।
 
মূলত বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে মারমা সম্প্রদায়ের জনসাধারণ বেশি হওয়ায় এখানে সাংগ্রাই উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন। তবে গেল বছরের মত এবারেও নানা আয়োজন না থাকলেও শুধু ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন করার কথা জানান উৎসব উদযাপন কমিটি।

বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটি ২১এর সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা বলেন, করোনার কারণে এবারও গতবছরের মত কোনো জমকালো আয়োজন বান্দরবানে হবে না তবে শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রার্থনা আর ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পাদন করা হবে। সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটি ২১এর সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা আরো বলেন, করোনার জন্য আমরা সবাই সর্তক রয়েছি তাই প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারে বান্দরবানে কোনো আয়োজন হবে না।

মহামারি করোনা এবারের পাহাড়ের বৈসাবি উৎসবের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে তবে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ কমে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।