ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ধুমধাম করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীর বিয়ে দিলেন প্রতিবেশীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
ধুমধাম করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীর বিয়ে দিলেন প্রতিবেশীরা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ধুমধাম আয়োজন করে দরিদ্র্য  বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীকে বিয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশীরা। এ আয়োজনে আবেগ-আপ্লুত ও কৃতজ্ঞ নব-দম্পতি।

তাদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস!

জানা গেছে, শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামের হতদরিদ্র সিরাজ শিকদার ও মমতাজ বেগম দম্পতির ছয় মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সোমা আক্তার (২১)। যিনি জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ছেলে বিয়ের পর থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাবা-মা ও বোনদের ভরণ পোষণে সামান্য অর্থ দিতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এদিকে সিরাজ শিকদারের পাঁচ মেয়ের বিয়ে হয়েছে আগেই। শুধু সবার ছোট মেয়েটি অবিবাহিত ছিল। মেয়ের বিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকা দরিদ্র্য এ পরিবারের পাশে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা।  

সোমাদের প্রতিবেশী আলী আহমেদ মৃধার বাড়ি রঙ করছেন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বাবুরচর এলাকার নোয়াব আলী খালাসীর ছেলে মোহাম্মদ খালাসী। তিনি ছোটবেলা থেকে সহজ-সরল ও অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন। তার এক পায়েও সমস্যা রয়েছে। ফলে অনেকটাই খুঁড়িয় চলাফেরা করেন তিনি। আলী আহমেদের বাড়িতে সোমার যাতায়াতের সময় মোহাম্মদ খালাসীর সঙ্গে সোমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। এটা বুঝতে পেরে প্রতিবেশী ও স্বজনরা সোমা ও মোহাম্মদের কাছে জানতে চান যে তারা দু’জন দু’জনকে বিয়ে করবেন কিনা? দু’জনই খুশি মনে বিয়েতে সম্মতি দেন এবং ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ের দাবি জানান। এটা শুনে ছেলের বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে দু’জনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। পরে আলী আহম্মদ মৃধা দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদারসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে শুক্রবার(১২ মার্চ) তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।

বিয়ে উপলক্ষে গেট, বড় প্যান্ডেল, বাজনা, মাইকসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। দুই শতাধিক অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয় পোলাও, গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, মুগ ডাল, পায়েস দিয়ে। কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়।

স্থানীয় লোকমান হোসেন বলেন, আমরা ছেলে ও মেয়ে দু’জনকেই চিনি। ওরা দু’জনই অনেক সহজ সরল ও ভালো। ওদের নিজেদের পছন্দমত বিয়ে হয়েছে। আমরা এলাকার সবাই সহযোগিতা করেছি।

অপর এক প্রতিবেশী বলেন, বিয়ে নিয়ে ওরা দু’জনেই অনেক খুশি। একে অপরকে খুব ভালোবাসেন। গায়ে হলুদের রাতে দু’জন অনেকক্ষণ নেচেছেন। অনেক আনন্দ করেছেন।

বর মোহাম্মদ খালাসী হাসতে হাসতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।

কনে সোমা আক্তার বলেন, ভালো লাগছে। আমরা খুশি।

কনের মা মমতাজ বেগম বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমার মেয়েটার বিয়ে হলো- এটা অনেক আনন্দের বিষয়। আমার মেয়েটা অনেক কাজ পারে। জামাইসহ মেয়ে আমার বাড়িতেই ঘর তুলে থাকবে। জামাইয়ের পরিবারও এতে রাজি আছে।

আলী আহমেদ মৃধা বলেন, মেয়েটি আমাকে মামা ডাকে। আর ছেলেটি আমার বাড়িতে থেকে দিনমজুরি দেন। মেয়েটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আর ছেলেটি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও কিছুটা সহজ সরল। স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে তাদের বিয়ে দিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এলাকার সবাই মিলে বরকে একটি অটোভ্যান কিনে দেবো, যাতে ও মেয়েটিকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে। '

পাঁচ্চর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, আমরা সবাই সহযোগিতা করে তাদের বিয়ে দিয়েছি। সবাই দোয়া করবেন ওদের জন্য। ওদের জন্য স্থানীয়দের এগিয়ে আসা একটা দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।