ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কলিমউল্লাহর সংবাদ সম্মেলনের পর তৎপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২১
কলিমউল্লাহর সংবাদ সম্মেলনের পর তৎপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ঢাকা: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে দোষারোপ করে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ)। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন প্রকল্পে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে এই সংবাদ সম্মেলন ছিলো।

তবে, শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত আশকারায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে বসেন এই উপাচার্য। এরপরই একটি বিবৃতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেখানে কলিমউল্লাহর দুর্নীতি নিয়ে শিগগিরই উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।  

একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি করেও জোর গলায় ভিসির কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই মন্ত্রণালয় তার দুর্নীতির ফাইলপত্রের বিষয়ে কর্ম নির্ধারণ নিয়ে আরো তৎপরতা শুরু করেছে।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিসি কলিমউল্লাহ শিক্ষামন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না। এজন্য সংবাদ সম্মেলনের পর পরই মন্ত্রণালয় তার ফাইলপত্র খুঁজতে তৎপর হয়। উন্নয়ন ও পরিকল্পনা শাখায় জমা হওয়া ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আলোচনা করেন।  

ওই কর্মকর্তা বলেন, কলিমউল্লাহ ভিসি হয়ে সেখানে যাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আন্দোলন হচ্ছে। তিনি সেই আন্দোলন ম্যানেজ করতে পারেননি। উল্টো ঢাকায় এসে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকার মনোনীত একজন ভিসি দোষ করেও মন্ত্রীকে নিয়ে কথা বলা শোভন নয়। তার এ বিষয়গুলো সরকার ভালোভাবে নেয়নি। আর ছয় মাসে তার মেয়াদ শেষ হবে। এ বিষয়গুলো সরকার দেখবে, সেজন্য উচ্চপর্যায়ের সভায় সিদ্ধান্ত হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও এই ভিসির বিষয়ে সরকারের কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।  

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউজিসি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিধায় এ প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই এবং এ সংক্রান্ত নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।  

এতে আরও বলা হয়, তার (ভিসি) বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়ে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাত শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বরাবর ৪৫ অভিযোগ পাঠায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৪ মার্চ থেকে এ নিয়ে তদন্তকাজ পরিচালনা করা হবে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ইউজিসি।

আরও পড়ুন>>>‘কলিমউল্লাহর অভিযোগ অসত্য, দুর্নীতির বিষয়ে সভা শিগগিরই’

গত ২ মার্চ স্বাক্ষরিত ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠি অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে আগামী ১৪ মার্চ সকাল ১১টায় অভিযোগকারীদের সব দালিলিক তথ্যপ্রমাণসহ সাক্ষীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ উপাচার্যের পিএসকেও পাঠানো হয়।

ভিসির বিরুদ্ধে আনীত ৪৫টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ভিসি হয়েও অনুপস্থিত থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমত পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক প্রশাসনিক পদ দখল ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন, উপাচার্যের অননুমোদিত ও অনিয়মতান্ত্রিক ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং, ঢাকাস্থ লিঁয়াজো অফিসে অতিরিক্ত খরচ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, চরম শিক্ষক সংকট।

সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। এজন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২১
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।