ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়ে ধর্ষণের মামলা দিয়ে ফেঁসে গেলেন মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২১
মেয়ে ধর্ষণের মামলা দিয়ে ফেঁসে গেলেন মা বিউটিকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, পাশের ছবিতে চেয়ারম্যান

নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক মাদরাসাছাত্রীকে একাধিকবার গণধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন তার মা বিউটি আক্তার। পরে তার মামলাটি মিথ্যা অভিযোগে করার প্রমাণ পেয়ে উল্টো বাদী বিউটির বিরুদ্ধেই এবার মামলা করেছে পুলিশ।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিউটি তার মেয়েকে (১৭) যৌন ব্যবসায় বাধ্য করেন। মামলায় বিউটি ছাড়াও আলাইয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।

মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, পুলিশের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ১ নং আসামি গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মেয়েকে ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে ছবি তোলা ও অপরহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেন।

মামলার সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আসামি ফয়সাল, সাইফুল ইসলাম ইমন ও জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভারের পূরগাঁও এলাকার রুবি নামে একজনের বাসা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ভিকিটিম অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ এ বিচারকের কাছে স্বেচ্ছায় ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন।  

পুলিশ আরও জানায়, জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সঙ্গে ভিকটিম একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। ২০১৭ সাল থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত ভিকটিমকে দিয়ে তার মা বিউটি আক্তার জোর করে টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করাতেন। বিভিন্ন লোকের থেকে টাকা নিয়ে নিজের মেয়েকে কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো ঢাকা বা চট্টগ্রামে পাঠাতেন বিউটি।

বিষয়টির প্রতিবাদ করলে কয়েকবার ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে মারধর করেন বিউটি। আগের মামলার সাক্ষী ও বর্তমান মামলার আসামি মোজ্জামেল হোসেন বিউটিকে টাকা দিয়ে ঘরে এসে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তেন। এক রাতে স্থানীয় ফয়সাল ও জোবায়ের তাদের এ অবস্থায় দেখে ফেলে দু’জনের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করেন।

পরে মোজাম্মেলকে বের করে দিয়ে ওই রাতে ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন ফয়সাল ও জোবায়ের। পরে বিউটি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার বাড়িতে মেয়েকে পাঠান। চেয়ারম্যান আনিস নিজ বাড়িতে রেখে একাধিকবার ‘ধর্ষণ’ করেন ভিকটিমকে।

এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে আলাইয়াপুর ৬ নং ওয়ার্ড নাপিতের পোল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মনববন্ধন করেন স্থানীয় লোকজন।

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিম ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দির আলোকে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশে মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন, আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্যকরণ, অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে যৌন ব্যবসা ও স্থানান্তরিত করে যৌনকর্ম করার অভিযোগে বিউটি ও চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিউটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যান আনিসসহ মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান সিকদার জানান, মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, অপহরণ, ভিডিও ধারণের ঘটনায় আগে দু’টি ও মানবপাচার দমন আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।