ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার সমাজচ্যুত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার সমাজচ্যুত তৌহিদুল ইসলাম শাওন

ফেনী: বিয়ে না হলেও সন্তান জন্ম দেওয়ায় কিশোরীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দিলেন স্থানীয় মুরব্বিরা।  

পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর পরিবারের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে।

ওই নারীর ভাই বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় মুরুব্বি কামরুল মাস্টার ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িতে এসে আমাদের বিরুদ্ধে একটি সভার সিদ্ধান্তের কথা বলে যান। তিনি হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, পুকুরের পানি ছাড়া গ্রামের কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। গবাদিপশু ঘরের বাইরে বাঁধা যাবে না। গ্রামের কোনো দোকানে যাওয়া যাবে না। কারও সঙ্গে মেশা যাবে না। গ্রামের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেউ তোমাদের সাথে মিশতে আসবে না।  

ওই নারীর বাবা অভিযোগ করেন, সমাজের লোকজন ঘটনার বিচার না করে আমাদের একঘরে করে দিয়ে অবিচার করলো। এখন আমরা অমানবিক জীবন যাপন করছি। কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না, কোথাও যেতে পারছি না। আমার আপন ভাই আমার ঘরে আসতে পারছে না, তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কামরুল মাস্টার বলেন, অবৈধ সম্পর্কের কারণে নবজাতকের জন্ম হয়েছে যা আমাদের সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। তাই ওইদিন এশার নামাজের পূর্বে উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক এলাকায় না থাকায় ওই পরিবারকে সাময়িকভাবে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

১৯ ফেব্রুয়ারি রাতের সভায় উপস্থিত ছিলেন মসজিদের ইমাম ছালেহ আহমদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, এশার নামাজের ৫ মিনিট আগে সিএনজিঅটোরিকশা চালক স্থানীয় যুবক ইস্রাফিল বিপুল আমাকে ফোন করে বলেন, মসজিদের সামনে আসেন সমাজের অনেক লোক আছে, অনাচারের বিচার না হলে আজ এশার নামাজ যথাসময়ে হবে না।

ওই সভায় মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন এলাকার লোকজন। তাদের কথা না মেনে কিছু লোক সাময়িক সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের পরিবারকে জানিয়ে দেয়।

মসজিদের ইমাম জানান, কামরুল মাস্টার, মাসুদ, আবু সায়েদ, ইসমাইল হোসেন টিপু, ইকবাল হোসেন মজনু, ইউছুপ, মিজানুর মিয়া, ইস্রাফিল বিপুলসহ বহু মানুষ সভায় উপস্থিত ছিলেন।  

ইস্রাফিল বিপুল বলেন, মেয়ের ভাই বিচার চেয়ে আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু সমাজের অন্যরা আমার কথা আমলে নেননি। পরে সবার সিদ্ধান্তে বিচার করা হয়েছে।  

বিষয়টি জানতে ঢাকায় বসবাসরত মসজিদ কমিটির সভাপতি কায়কোবাদকে ফোন করা হলে তিনি এসএমএস এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে চার্জ নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমি ঘটনাটি জানার পর ফুলগাজী থানার ওসিকে অবহিত করি।

ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুতুব উদ্দিন বলেন, ওই পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছি। তাকে বলেছি, যদি এই রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।

এর আগে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ওই কিশোরীর মায়ের করা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি একই উপজেলার বশিকপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওনকে (২১) রাঙামাটি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী কিশোরী।  

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে শাওন। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় কিশোরীটি। জন্মের তিন দিন পর পরিবারের সম্মতিতে নবজাতককে দত্তক দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
এসএইচডি/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।