ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শীতে কাঁপছে লালমনিরহাট, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
শীতে কাঁপছে লালমনিরহাট, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

লালমনিরহাট: ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাট। এ জেলায় শীতের আমেজ কিছুটা আগেই অনুভূত হয় এবং এর ব্যাপ্তিও থাকে দীর্ঘ সময়।

এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

শীতের শুরু থেকে রাতে শীতের ঘনত্ব থাকলেও সকালে সূর্যের দেখা মেলায় শীত তেমন কাবু করতে পারেনি এ জনপদের মানুষকে। তবে গত সপ্তাহ ধরে এ জনপদে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি যুক্ত হওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঠাণ্ডা বেড়েছে কয়েকগুন। দিনের মধ্যভাগে সূর্যের দেখা মেললেও গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে ঠাণ্ডার দাপটও বেড়েছে কয়েকগুন। শীতের তীব্রতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার প্রায় অর্ধশত চরাঞ্চলের ছিন্নমুল পরিবার। শ্রমজীবী মানুষ পেটের দায়ে তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়েছেন। সকাল পর্যন্ত হাট বাজার বিপণীবিতান ও সড়কগুলোতে মানুষের আনাগোনা অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি কাজের জন্য ঘরের বাইরে বের হয়েছে মানুষ। ফুটপাত ও পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষদের ভিড়।  

রিকশা চালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শীতের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো পেটে ভাত যাবে না। পরিবারের সদস্যদের খাবার যোগাড় করতেই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু যাত্রী না থাকায় দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা আয় হয়েছে। দিনভর চেষ্টা করে যা আয় হবে তা দিয়েই চলবে সংসার।  

গোবর্দ্ধন চরের আজিজুল, রফিকুল ও নেছার আলী বলেন, শীতের সময় চরাঞ্চলের ঘরেও থাকা কষ্টকর। বাঁশে ও ভাঙা বেড়া দিয়ে শীত ঘরে ঢুকে বিছানাও হিম হয়ে যায়। ঠাণ্ডার কারণে রাগে ঘুমও হয় না। শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহের হিমেল বাতাশে বুকের ভিতরেও ঠাণ্ডা লাগে। এই ঠাণ্ডাতেও পেটের দায়ে মাঠে কাজ করি। কাজ না করলে তো পুরো পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।  

গাছের পাতা ও খড় কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শরীর তাপানো ভেলাবাড়ি গ্রামের সকিনা, বুলবুলি ও মইনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এমন ঠাণ্ডা কখনই দেখি নাই। সারা শরীর শুধু কাঁপছে। ঠাণ্ডা বাতাসে ঘরের বিছানাও ঠাণ্ডা হয়ে যায় ঘুম আসে না।  

শীতার্ত মানুষদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীত বস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ অব্যহত রয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন শীতার্তরা। শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরণের দাবি জানান শীতার্ত ছিন্নমুল এসব পরিবার।  

তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত সর্দ্দি-জ্বর, কাশি, নিউমেনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে। সকল হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে ৪০ হাজার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ১০ হাজার মিলে মোট ৫০ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শিশুদের জন্য সোয়েটারের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।