ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ক্ষতি ১৪০ কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
রাজশাহীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ক্ষতি ১৪০ কোটি টাকা

রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলো এখনও বসবাসের অনুপযোগী রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব পরিবারের লোকজন এখনও ঘরে ফিরতে পারছেন না।

ফলে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবারের মানুষ গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন।

এবারের বন্যায় রাজশাহীতে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৪০ কোটি টাকার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩২ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। আর পুকুর ও বিল ডুবে চাষকৃত মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০৭ কোটি টাকার।

জানা যায়, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার সব নদী-নালা ও খাল-বিল। সেই সঙ্গে মান্দায় টেংরা নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ফুঁসে উঠে বাগমারার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই ও ফকিন্নী নদীর পানি। পানির প্রবল চাপে একের পর এক বারনই ও ফকিন্নী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। এক রাতের মধ্যে তলিয়ে যায় উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কয়েকটি এলাকা ছাড়াও সোনাডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া, দ্বীপপুর, বড়বিহানালী ও ঝিকরাসহ ১১টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। ঘরের জানালা পর্যন্ত পানি উঠায় এবং কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় প্রায় ২০ হাজার পরিবারের মানুষ গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন।

বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা ও আউশ ধান, ৩  হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা ও আমন ধান এবং ১ হাজার ১৩৯ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এছাড়া ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ছিল পানের বরজ।  

অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া, দ্বীপপুর, বড়বিহানালী, ঝিকরা, মাড়িয়া, হামিরকুৎসা ও গোয়ালকান্দিসহ ১১টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ২১০ হেক্টর জমির রোপা ও আউশ ধান, ৫০০ হেক্টর জমির রোপা ও আমন ধান, ১০ হেক্টর জমির সবজি এবং ৩৫ হেক্টর জমির পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে যায়। ‌ এতে কৃষি খাতে প্রায় ৩২ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনাকাঙ্খিত বন্যায় সোনাডাঙ্গা, দ্বীপপুর, কাচারী কোয়ালীপাড়া, বড়বিহানালী, ঝিকরা ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে ৪০টি পুকুর ভেসে যায়। এসব পুকুরে নেট দিয়ে ঘিরে মাছ আটকানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। বন্যার পানিতে পুকুরগুলোর চাষের সব মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া কয়েকটি বিলও ডুবে যাওয়ায় ওইসব বিলের চাষের মাছ ভেসে গেছে। পুকুর ও বিল ডুবে প্রায় ১০৭ কোটি টাকার চাষ মাছ ভেসে যায়।  

উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সালামত উল্লাহ বলেন, আমি চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ও আমন ধান চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে আমার সব জমির ধান তলিয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।  

ঝিকরা ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার আট বিঘা জমির রোপা, আমন ও আউশ ধান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমি এখন দিশেহারা।

বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দু’দফা বন্যায় বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় ৩ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে কৃষি খাতে মোট ৩২ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা প্রস্তুতের কাজ শেষ হলেই বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে গৃহহীন পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

বাগমারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ বন্যা হওয়ায় মৎস্য চাষিরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেননি। এ কারণে চাষের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ১০৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad