ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন করোনা ঝুঁকি কমায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন করোনা ঝুঁকি কমায় ওয়েবিনার

ঢাকা: কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত এয়ার ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখা এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান ও কোভিড-১৯: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আশু করণীয়’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে বক্তারা এ পরামর্শ দেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওয়েবিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর সম্মানী সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. রনক আহসান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল এবং কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট বাকাইনস্কি পিইঞ্জ। এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ও বুয়েটের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবুল হোসাইন।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ অনেকটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদের দেশ অত্যন্ত জনবহুল, আমাদের সম্পদও সীমিত। আর তাই আমাদের জন্য বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। পল্লী অঞ্চলে এয়ার কন্ডিশনিং এর ব্যবহার সামান্য হলেও শহর অঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে, ব্যবসায়িক, সরকারি বা বেসরকারী সকল ক্ষেত্রে এইচভিএসি (হিটিং ভ্যান্টিলেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং) এর ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তাই এয়ার কন্ডিশনিং কোভিড-১৯ এর উপর কতটা প্রভাব ফেলছে বা কতটা ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটি হালকা করে দেখার উপায় নেই। ঢাকা এতটাই জনবহুল যে আমাদের একটি ভুল বা অসাবধানতা, কোভিড-১৯ এর মারাত্মক বিস্তৃতি ঘটাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে নতুন নতুন যেসব বিল্ডিং, হাসপাতাল, মার্কেট তৈরি হচ্ছে সেখানে হয়তো এইচভিএসি কিছুটা হলে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডিজাইন হচ্ছে কিন্তু পুরনো স্থাপনাগুলো সেভাবে তৈরি করা নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিল্ডিং করা হয়েছে এক উদ্দেশ্যে কিন্ত সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে যেমন প্রাইভেট ক্লিনিক, গার্মেন্টস ইত্যাদি। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এই সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি।

‘একটি বিল্ডিং যেটি অলরেডি তৈরি হয়ে আছে সেটিতে এইচভিএসি এর জন্যে পরিবর্তন, পরিমার্জন সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তাই আমাদের প্রকৌশলীদের খুঁজে বের করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের পাশাপাশি এডহক ভিত্তিতে কোনো সমাধান বের করা যায় কিনা। আবার শুধু সমাধান দিলেই হবে না, সেটা যদি সাশ্রয়ী না হয় তাহলে আমাদের দেশে সরকারি, বেসরকারি কোনো পক্ষই সেটা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী হবে না বা পারবে না। তাই আপনারা যারা পেশাজীবি আছেন, আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে কেমন করে কম খরচে এই দীর্ঘ মেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী সমাধানগুলো তৈরি করা যায় বা প্রয়োগ করা যায়। ’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, বিশ্ব আজ মহামারি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। সে দিক থেকে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে বিভিন্ন কারণে কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী কী করণীয় তা আমাদের গবেষকরা বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এই ওয়েবিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করবো।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, কোনো ভাইসরাসের ড্রপলেট যত বড় হয় তত তাড়াতাড়ি তা নিচে পড়ে যায়। কিন্তু কোনো ভাইসরাসের ড্রপলেট যদি ছোট হয় তাহলে এটা বাতাসে ভেসে বেড়াবে এবং তত বেশি সময় নেবে মাটিতে পড়তে। এসি করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের বাইরে থেকে কোনো ভাইরাস যদি ভেতরে চলে আসে তাহলে সেই ভাইরাস দ্রুত যেন বাইরে বের করা যায় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যার জন্য পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার রয়েছে যেগুলো দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের জীবাণু বাইরে বের করে আনা সম্ভব। এর ফলে ঝুঁকি কমে আসবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় এসি ইনস্টল করলে বাতাস জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ থাকবে। আবদ্ধ জায়গায় বাতাস নিরাপদ বা জীবাণুমুক্ত রাখতে তিনটি প্রধান বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো হলো- ভেন্টিলেশন, এয়ার ফিল্টারেশন ও ডিস্ট্রিবিউশন।

বিকাশ মণ্ডল তার উপস্থাপনায় আরও বলেন, কোনো স্থাপনার ভেতরের বাতাস যদি বাইরের বাতাস দিয়ে দ্রুত পরিবর্তন করা হয় তাহলে দ্রুত জীবাণু ধ্বংস করা সম্ভব, প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত জীবাণু বের করে ফেলা সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় ১০ বার করে বাতাস পরিবর্তন করলে ৩১ মিনিটের মধ্যে বাতাস নিরাপদ করা সম্ভব। তবে এসব কিছুই ইন্টেগ্রেটেড অর্থাৎ সমন্বিত উপায়ে করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
এমইউএম/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad