ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিবচরের দুর্গম চরে ইলিশ বেচা-কেনা!                                                                       

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিবচরের দুর্গম চরে ইলিশ বেচা-কেনা!                                                                       

মাদারীপুর: ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম এখন। মা ইলিশ রক্ষার্থে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য বন্ধ থাকছে ইলিশ আহরণ।

কিন্তু এ সময় কিছু অসাধু জেলের অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে ক্রেতাদেরও যেন উৎসব! সস্তায় বড় বড় ইলিশের লোভ সামলানো যেন বড় দায়!

ইলিশ ধরা বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দূর্গম চরে পদ্মার পাড়ে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বসেছিল ইলিশের হাট।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদিনে ধরা পড়া ইলিশ সঙ্গে সঙ্গে তীরে এনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মাত্র চারশ’/পাঁচশ’ টাকায়। আর একটু ছোট ইলিশ যেন পানির দামে পাওয়া যাচ্ছে। নদীর পাড়ে এনে এক হালি, দুই হালি করে একসঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ইলিশ মাছ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মঙ্গলবার শিবচর উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন থাকার কারণে প্রশাসন ব্যস্ত ছিল নির্বাচন নিয়ে। এ ধারণা থেকে অন্যান্য দিনের চেয়ে মঙ্গলবার কেনা-বেচা বেশি হয়েছে। আর দিনে পদ্মায় স্বাভাবিকভাবেই মাছ শিকার করতে পেরেছেন জেলেরা। নদীর পাড়ে এনে বিক্রিও করেছেন প্রচুর ইলিশ।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের শেষ সীমানায় নদীর পাড়ে অসাধু জেলেরা পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি করেন। শিবচরসহ দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ সস্তায় ইলিশ কিনতে দূর্গম চরাঞ্চলে আসেন। বিস্তীর্ণ চর এলাকা থেকে হেঁটে আবার ট্রলার নিয়েও মাছ কিনতে আসেন সাধারণ মানুষ।

গত মৌসুম থেকেই ইলিশ সংরক্ষণে প্রশাসনের অভিযান রয়েছে চোখে পড়ার মতো। এবারও প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। প্রতিদিনই জেলেদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। করা হচ্ছে জেল-জরিমানা। এরপরও কেউ কেউ গোপনে মাছ ধরছেন। এক শ্রেণির ক্রেতারা তা কিনতে দুর্গম চর এলাকায় আসছেন।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, এ সময়ে ইলিশ পরিবহন, বেচা-কেনাও নিষিদ্ধ। ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিয়মিত পদ্মা নদীসহ জেলার হাটবাজারগুলোতে প্রশাসনের অভিযান চলছে। গত সাতদিনে পদ্মা নদীর শিবচর অংশে ইলিশ ধরার অভিযোগে আটক করা হয়েছে অন্তত ১০৪ জনকে। যাদের মধ্যে জেল বা জরিমানা করা হয়েছে ৯২ জন জেলেকে। এ সময়ে ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ মিটার ইলিশ ধরার জাল। এ পর্যন্ত শিবচরে ইলিশ ধরার দায়ে আদায় করা জরিমানার পরিমাণ ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। আর জব্দ করা হয় ১৪০ পিস ইলিশ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। তবে মঙ্গলবার শিবচর উপজেলায় উপ-নির্বাচন থাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত ছিলেন। এ জন্য মঙ্গলবার শিবচরে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তবে রাত থেকে যথারীতি অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পদ্মা নদীর দুর্গম এলাকাতেও অভিযানে অংশ নিচ্ছি। যেসব এলাকায় মাছ বিক্রির অভিযোগ পাই, সেখানেও আমাদের তৎপরতা থাকে। এরপরও কিছু অসাধু জেলে গোপন মাছ ধরে বিক্রি করে থাকেন। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, ইলিশ সংরক্ষণের। পুরো মৌসুমে আমাদের অভিযান জোড়ালোভাবেই চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।