ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস

সুযোগ পেলে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করতে পারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
সুযোগ পেলে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করতে পারে কালের কণ্ঠ ও পিএসটিসি আয়োজিত ওয়েবিনার

ঢাকা: ছেলেদের মতো মেয়েদের সমান সুযোগ দিলে মেয়েরাও অনেক ভালো করতে পারে। দেশের অনেক সেক্টরে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই ভালো করছে— এটি তারই প্রমাণ।

সারাজীবন মেয়েদের রান্না, সন্তান পালন ও সংসারের কাজের মানুষ না ভেবে পুরুষ যদি তার সমান ভাবে তাহলে মেয়েদের প্রতি অবহেলা দূর হবে।

৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দৈনিক কালের কণ্ঠ ও পিএসটিসি আয়োজিত ‘সমতা বিধানের লক্ষ্যে চলো আওয়াজ তুলি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বাগত বক্তব্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, দেশ ও মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। ছেলে এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে বৈষম্য আমরা বহু বছর ধরে দেখে আসছি। দেশ এবং সমাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা কি নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে পেরেছি। বিশ্বের অনেক দেশে এখনো কন্যাশিশু জন্মাবে এমন সম্ভাবনা দেখো গেলে ভ্রুণ হত্যা করা হয়। কন্যাশিশু জন্মালে মায়ের ওপর অত্যাচার চলে। পরিবার থেকে পরিত্যাগ করা হয়। কিন্তু মানুষ কখনো বুঝতে চায় না, বিশ্বাস করতে চায় না— এই পৃথিবী ও সমাজ চলে নারী-পুরুষের যৌথ নেতৃত্বে। নারীকেই পরম করুণাময় একমাত্র মা হওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন।

ইমদাদুল হক মিলন আরও বলেন, সমতা বিধানের লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে এই বিভেদের ধারণা উচ্ছেদ করতে হবে, প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া যে, কন্যা এবং ছেলে শিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করছে। যে গ্রামের নাম আমরা জানতাম না, সেই কলসিন্দুরের মেয়েরা ফুটবল খেলে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছে। আমাদের জন্য দুর্লভ সম্মান বয়ে এনেছে। আমাদের দেশটিকেই যিনি বদলে দিয়েছেন তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী। এই কন্যা সন্তানটি যদি না জন্মাতো তাহলে বাংলাদেশের চেহারা আজ কী থাকতো? প্রধানমন্ত্রীর জন্ম না হলে আজকের বাংলাদেশ এত সুন্দর হতো না। সুতরাং প্রত্যেকটি ছেলে এবং মেয়ে শিশু সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। তাদের পরিচর্যা করা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পারভীন আকতার বলেন, নারী ও শিশুর উন্নয়নে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। নারীর ভূমিকা নির্ধারিত হয় যগ যুগ ধরে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক ট্যাবু এবং ধর্মীয় কারণে। একজন মা প্রথমেই পুত্র সন্তান আশা করেন কারণ সমাজ এবং বাস্তবতা তার কাছে এটাই প্রত্যাশা করে। অবচেতন ভাবেই তিনি কন্যা সন্তানের চেয়ে পুত্র সন্তান কামনা করেন। এ কারণে নারীদের মধ্যেও স্ববিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, বিয়ের পরে মেয়েদের প্রধান ভূমিকাই মনে করা হয় রান্না এবং সন্তান পালন করা। একটি কন্যাশিশু যখন বুঝতে পারা শুরু করলো যে, পরিবারে তার ভাইয়ের প্রতি শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, তখনই তার মধ্যে একটি সহনশীলতা তৈরি হয়। সুতরাং মেয়েরা জন্মগত ভাবেই সহনশীল। কন্যাশিশুর প্রতি কম সুযোগ তৈরি হয়। প্রাকৃতিকভাবে কন্যা শিশুদের মনন মেধা অনেক বেশি সহনশীলভাবে গড়ে ওঠে। তাই কন্যাশিশুদের যদি সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে রাষ্ট্র অনেক যোগ্য ও মেধাবী নাগরিক পাবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ জামান খান কবির বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। ভৌগলিক অবস্থান ভেদে চাহিদার ভিত্তিতে আমরা ৭০ শতাংশের বেশি নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এসব প্রশিক্ষণে আমাদের মেয়েরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার মোতাবেক ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রামের আওতায় এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, কন্যাশিশু জন্মালে তাদের অবহেলা করি। তাদের মূল্যায়ন করার প্রয়োজন। তাদের মূল্যায়ন করতে প্রতি বছর একটি দিবস পালন করা হয়। সরকারও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তারপরও ২০১৯ সালের হিসাবে প্রতিবছর ৪৯ শতাংশ কন্যাশিশুর বাল্য বিয়ে হচ্ছে। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ২৪ শতাংশ কন্যা। প্রাথমিক শিক্ষায় ১৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক শিক্ষায় ৪৬ শতাংশ শিশু ঝড়ে পড়ছে। ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ কন্যা শিশুর যথাযথভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। কন্যা শিশুরা এমনিতেই পিছিয়ে আছে। কোভিড-১৯ তাদের আরও পিছিয়ে দিয়েছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে কন্যারা ওদের মতো করে বেড়ে উঠুক।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ট্রেনিং) মাজহারুল হক মাসুদ, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাটিয়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল—বাংলাদেশের হেড অব ইনফ্লুয়েন্সিং কাশফিয়া ফিরোজ, পিএসটিসির হ্যালো আই অ্যাম প্রগ্রামের টিম লিডার ড. সুস্মিতা আহমেদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের এডুকেশন সেকশনের আরলি চাইল্ডহুড স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ মহসিন ও আরএইচ স্টেপ’র নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।