ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফল বাগান করে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
ফল বাগান করে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প গাছে ঝুলছে গ্রিন মাল্টা। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: নিজ এলাকার একটি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে রাজধানীতে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কয়েক বছর চাকরি করেছিলেন মো. আকবর হোসেন জীবন। তখন যা বেতন পেতেন তা দিয়ে সংসারে টানাপড়েন লেগেই থাকে আকবরের।

তাই সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চাকরি ছেড়ে এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা শুরুর মনস্থির করেন তিনি। তখন শ্রমিকদের বেতন দিয়ে হিসাব করে মাস শেষে খুব বেশি টাকা থাকতো না তার।  

তখন মাথায় ঘুরপাক খেতো কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। এমন চিন্তা থেকেই পাহাড়ে দুই একর জায়গা লিজ নিয়ে ১০১৮ সালে ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। এক বছর পরই গাছে ফল আসা শুরু হয়।

বলছিলাম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খিলমুরারী এলাকার মনির আহমেদ মাস্টারের ছেলে মো. আকবর হোসেন জীবনের কথা।  

পাহাড়ের বুকে গড়ে তুলেছেন তিনি ‘ফিউচার এগ্রো হোমস’ নামে সমন্বিত ফলের বাগান। যা এখন প্রেরণা যুগাচ্ছে বেকার যুবকদের। দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের কারণে আকবর এখন সফল একজন উদ্যোক্তা। তার বাগানে ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু ফল যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

সরেজমিনে ‘ফিউচার এগ্রো হোমসে’ গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে গাছের মধ্যে থোকায় থোকায় ঝুলছে গ্রিন মাল্টা। গাছের মধ্যে পাকা আধা পাকা পেঁপে দেখে মনটা ভরে গেছে। ফলন এসেছে কমলা গাছেও। বাগানে প্রবেশ করতে নজর কাড়লো ছোট একটি সাইনবোর্ডে তাতে লিখা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ একটু পরে আরেকটি সাইনবোর্ডে চোখে পড়লো ‘মাশাআল্লাহ’। পাহাড়ের বুকে একখণ্ড ফলের বাগান দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।

...আকবর হোসেন বাংলানিউজ বলেন, পড়াশোনা সম্পন্ন করার পর চাকরি ও ছোটখাটো ব্যবসায় কিছুতেই আমার মন বসছিলো না। পোল্ট্রি ব্যবসার জন্য একজনের কাছ থেকে জমিও নিয়েছিলাম, পরে আর তা করা হয়নি। এরপর ওমান যাওয়ার জন্য দ্রুত পাসপোর্ট বানিয়েছি, মেডিক্যাল করে রিপোর্ট পাঠিয়েছি কিন্তু ভিসা না হওয়ায় যেতে পারিনি। শেষমেশ মনস্থির করলাম দেশে কিছু একটা করা প্রয়োজন।  

তখনই ২০১৮ সালে বাড়ির পূর্বপাশে পাহাড়ে দুই একর জায়গা লিজ নিয়ে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করলাম। ২৫০ পিস বারি-১ ও বাউ-৩ গ্রিন মাল্টা, ১শ পিস পেঁয়ারা, ২শ পিস রেডলেডি, ফাস্টলেডি পেঁপে, ৬০ পিস কমলা, থাই পেঁয়ারা, ১শ পিস লেবু, ১১ পিস আপেল, ৩ পিস আলু বোখরা ও কিছু চায়না-৩ লিচু চারা রোপণ করেছি। এক বছর পরই গাছে ফলন এসেছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। পেঁয়ারা বিক্রি করেছি ৪০ হাজার টাকার। এবছর মাল্টা বিক্রি শুরু করেছি। এই পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি এবং গাছে যে পরিমাণ মাল্টা রয়েছে আরও দেড়লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী। আমার বাগানের ফলে কোনো ধরনের মেডিসিন ও ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে আগামী বছর তাহলে আমি ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

ওই উদ্যোক্তা বলেন, আমি ইউটিউব চ্যানেলে বাগান করার ভিডিওক্লিপ দেখে দেখে সব শিখেছি। কিভাবে চারা রোপণ, কিভাবে পরিচর্যা করতে হয়। সহযোগিতার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। একবার একজন কৃষি উপসহকারী বাগান পরিদর্শন করে গেছেন ঠিকই পরে কোনো সহযোগিতা পাইনি। এ পর্যন্ত আমার প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামীতে আমার আরও পরিকল্পনা রয়েছে।  

তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কৃষকরা উচ্চ শিক্ষিত। তাই আমাদের দেশেও শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির আশা না করে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুরোধ করবো।

ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি আকবর ভাইয়ের ফলের বাগানে গিয়েছি। পাহাড়ের কোলে এত সুন্দর বিভিন্ন ফলের বাগান আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে। তার বাগানের বিভিন্ন ফলও আমি সংগ্রহ করেছি। অনেক সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত। আমি আশাবাদী আকবর ভাইকে দেখে আরও অনেকে এই ধরনের উদ্যোগ নেবে।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বাংলানিউজকে বলেন, আকবর হোসেন নামে কোনো ফল বাগানের উদ্যোক্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা তাকে সহযোগিতা করতাম। আপনি (প্রতিবেদক) উনার মোবাইল নম্বর দেন আমি উনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।