ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন পাঁচ সাংবাদিক

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন পাঁচ সাংবাদিক

সাভার (ঢাকা): রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর), রাত ৮টা ১০ মিনিট। আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের ভেতরে বিভিন্ন আলোচনায় ব্যস্ত সাংবাদিকরা।

এ সময় হঠাৎ বাইরে বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ। সেই শব্দ শোনে বাইরে গেলেন সাংবাদিক লাইজু আহমেদ চৌধুরী, মোজাফর হোসেন জয়, মাফুজুর ইসলাম নিপু, জাহিদ হাসান সাকিল ও সাহিনুর রহমান সাহিন।

২ থেকে ৩ মিনিট পরেই আবার তাদের পাশে আরেকটি বিস্ফোরণ। কিছুটা দূরত্বে ও প্রাইভেটকারের নিচে ককটেলটি থাকায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। জীবন বাঁচিয়ে বিস্ফোরিত স্থান দ্রুত ত্যাগ করেন তারা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান এই সাংবাদিকরা।

প্রেস ক্লাবের মতো একটি জায়গায় ঘটনাটি ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। আর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ঘটনার প্রতক্ষদর্শী প্রেস ক্লাবের আহবায়ক ও মোহনা টিভির প্রতিবেদক লাইজু আহমেদ চৌধুরী, সময় টিভির প্রতিবেদক মোজাফর হোসেন জয়, যমুনা টিভির প্রতিবেদক মাফুজুর রহমান নিপু, এটিএন নিউজের প্রতিবেদক জাহিদ হাসান সাকিল ও দেশ টিভির প্রতিবেদক সাহিনুর রহমান সাহিন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহতু প্রেস ক্লাবটি নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়করে পাশে, সেহতু প্রথম বিস্ফোরণে সাংবাদিকরা ভেবেছিলেন বাইরে মনে হয় কোনো পরিবহনের টায়ার বিস্ফোরণ হয়। পরে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ওই পাঁচ সাংবাদিক বাইরে গিয়ে দেখেন ককটেলের স্প্লিন্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে৷ এর ঠিক ২ থেকে ৩ মিনিট পর তাদের পাশেই আরেকটি কালো স্কচটেপে মোড়ানো ককটেল প্রেস ক্লাবের সামনে রাখা সময়টিভির গাড়ির নিচে বিস্ফোরিত হয়। পরে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোজাফফর হোসেন জয় আতঙ্কিত অবস্থায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি মাদকসহ দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। এর কয়েকদিন পর মাদক ব্যবসায়ী মানিক ২৩ সেপ্টেম্বর আমাকে বোমা মেরে ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। নিজের জীবন রক্ষার্থে থানায় একটি সাধারণ জিডি করি। জিডি করার পর আমার উপর এমন হামলা হয়েছে৷ আমার ধারণা, আমাকে উদ্দেশ্য করে তারা ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। তারা ভেবেছে আমি গাড়ির ভেতরে রয়েছি এর জন্য গাড়ির নিচে বিস্ফোরণ করেছে৷

তিনি আরও বলেন, আমি গাড়িতে থাকলে আজ আর হযতো বেঁচে থাকতাম না। আমি অনিরাপত্তায় দিন পার করছি। যে কোনো সময় আমার উপর হামলা হতে পারে।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এটিএন নিউজের প্রতিবেদক জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অল্পের জন্য আমরা পাঁচজন আজ প্রাণে বেঁচে গেছি। ঘটনাটি পরিকল্পিত। প্রেসক্লাবের সিসিটিভির ক্যামেরাগুলো উল্টানো ছিল। যাতে আমরা বিষয়টি দেখতে না পারি কারা এই কাজটি করেছে৷ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমি জোর দাবি জানাবো বিষয়টি যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। এবং আমরা সাংবাদিকরা যেন নিরাপদে থাকতে পারি৷

প্রেসক্লাবটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টিভির প্রতিবেদক মাহফুজুর রহমান নিপু বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ঘটনাটির সঙ্গে যারাই জড়িত রয়েছে প্রশাসন যেন খতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় 
এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেন। ’

আশুলিয়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি লাইজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমি এর বিচার চাই। একটুর জন্য পাঁচজন সাংবাদিকই আজ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসলাম। প্রেস ক্লাবেও যদি সাংবাদিকরা নিরাপত্তা না পায় কোথায় নিরাপত্তা পাবো?’ 

প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দেশ রুপান্তরের প্রতিবেদক খোকা মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কত ভয়ংকর হলে এতো ন্যক্কারজনক হামলা হতে পারে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসপি (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। বিস্ফোরণের আলামত সংরক্ষণ করে নিয়ে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এদিকে ঘটনাটি ঘটার পরপরই প্রেসক্লাবে ছুটে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতাসহ স্থানীয়রা। তারাও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।