ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এক মোরগের দাম ২০ হাজার টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
এক মোরগের দাম ২০ হাজার টাকা! ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল: দেশের বাজারে একটি মোরগের দাম কত হতে পারে? বড় জোর হাজার বা দেড় হাজার টাকা! কিন্তু যদি বলা হয়, একটি মোরগের জন্য চাওয়া হচ্ছে ২০ হাজার টাকা! 

ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে মলত্যাগ করায় প্রতিবেশীর একটি মোরগ জবাই করায় এমন জরিমানাই করা হয়েছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়ার ইউনিয়নের ভুগোলহাট গ্রামের আব্দুল হালিমকে। দুই দফায় আট হাজার টাকা দিয়েও রেহাই মিলছে না তার।

চলছে জরিমানার বাকি ১২ হাজার টাকা আদায়ের পায়তারা। উপায়ন্ত না দেখে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে অবশেষে ২১ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল হালিম।  

মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট ভুগোলহাট গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বাবুর একটি মোরগ প্রতিবেশী আব্দুল হালিমের ঘরে ঢুকে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে মো. রাকিবের পড়ার টেবিলে মলত্যাগ করে। এসময় রাকিব মোরগটিকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লে মোরগটি আহত হয়। মোরগটি মরে যেতে পারে এ কথা  ভেবে দ্রুত সেটি জবাই করেন তিনি। পরে আব্দুর রাজ্জাক বাবুকে ডেকে জবাই করা মোরগটি দিয়ে দিলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে আব্দুর রাজ্জাক বাবু সপরিবারে মোরগটি রান্না করে খান। কিন্তু এরপর এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বাবু স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে মোরগ হত্যার বিচার চান। পরে গত ২৮ আগস্ট এলাকার মাতব্বররা স্থানীয় আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার সভাপতিত্বে সালিশ বৈঠকে বসেন। সালিশে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে একটি মোরগের জন্য ২০ হাজার টাকা করা হয় এবং রাবিককে দেওয়া শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয়।  

ওই সালিশে অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হাই, ফজলু শেখ, মো. কফিল উদ্দিন ও জয়েদ আলী। ফজলু শেখ, আব্দুস সামাদ, শামীম, কোরবান আলী ও আব্দুল মোতালেবের সিদ্ধান্তে এ দণ্ড দেওয়া হয়। সালিশে রাকিবের বাবা আব্দুল হালিম নিরুপায় হয়ে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বরদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু প্রভাবশালী মাতব্বররা ক্ষমা না করে বাকি টাকার জন্য তারিখ দেন। মাতব্বদের চাপের কারণে কোনো উপায় না থাকায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ধার দেনা করে আরও তিন হাজার টাকা জয়েদ আলী ও আব্দুল কুদ্দুসের হাতে দিয়ে আব্দুল হালিম তাদের কাছে ক্ষমা চান। মোট আট হাজার টাকা পেয়েও সন্তুষ্ট হননি মাতব্বররা। বাকি ১২ হাজার টাকার জন্য আব্দুল হালিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন তারা। কোনো উপায় না পেয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল হালিম।  
 
মোরগের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বাবু জানান, দুই দফায় জরিমানার আট হাজার টাকা তিনি পেয়েছেন। বাকি ১২ হাজার টাকা জন্য মাতব্বররা বা তিনি আব্দুল হালিমের পরিবারকে কোনো চাপ দেননি।  

ভুক্তভোগী আব্দুল হালিম বলেন, ছেলে ভুল করে প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাকের মোরগটিকে আঘাত করে এবং জবাই করে। পরে আমি মালিককে ডেকে এনে তার মোরগটি বুঝিয়ে দিয়েছি। পরে মোরগের মালিক আমার ছেলের বিরুদ্ধে মাতব্বরদের কাছে বিচার চান। বিচারে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে আমার ছেলেকে শারীরিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়। দুই দফায় আট হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। তারপরও রেহাই পাইনি। বাকি টাকার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।