ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দূষণ-দখলের কবলে আপন গৌরব হারিয়েছে কাপ্তাই হ্রদ

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
দূষণ-দখলের কবলে আপন গৌরব হারিয়েছে কাপ্তাই হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ, ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা পাহাড়ি জেলার নাম রাঙামাটি। এই জেলার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সম্পদ হলো কাপ্তাই হ্রদ।

তৎকালীন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীতে ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করলে প্রায় ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি তলিয়ে যায়।  

সরকারি সংরক্ষিত বনের ২৯ বর্গমাইল এলাকা ও অশ্রেণিভুক্ত ২৩৪ বর্গমাইল বনাঞ্চলও ডুবে যায়। এক লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত হয়। কাপ্তাই এলাকায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে বলে কালের পরিক্রমায় ৭৭৫ বর্গকিলোমিটারের কৃত্রিম এই হ্রদটি কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত।

বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, মৎস্য সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাছ, বাঁশ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হ্রদটি অসামান্য অবদান রাখছে। পুরো জেলার ছয়টি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এই হ্রদ দিয়ে। হ্রদটি রাঙামাটির ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।
কাপ্তাই হ্রদ, ছবি: বাংলানিউজ

যে হ্রদটি পুরো জেলার অর্থনৈতিক চাকা ঘুরাচ্ছে সেই হ্রদটি সবচেয়ে গ্রাসের শিকার হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে গড়ে উঠছে সুবিশাল অট্টলিকা, হোটেল-মোটেল। এইসব হোটেল-মোটেল এবং আবাসিক ভবনের বর্জ্যগুলো নদীতে পড়ে পানি হচ্ছে দূষিত। ভরাট হচ্ছে হ্রদ।  

এক সময় এই হ্রদের সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হাজার-হাজার পর্যটক ছুটে আসলেও বর্তমানে হ্রদটি দূষণ এবং দখলের কবলে পড়ে তার আপন গৌরব হারিয়ে ফেলেছে।  

এই হ্রদের পানি এ অঞ্চলের মানুষ নির্দ্বিধায় পান করতো। বর্তমানে গভীর নলকূপের পানিই খাবারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড সাপ্লাই এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের এক পরীক্ষায় কাপ্তাই হ্রদের পানি খাবারের জন্য অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো যখন যে ক্ষমতায় এসেছে তাদের দলের নেতাকর্মীরা কাপ্তাই হ্রদের পাড় দখল করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাণিজ্য করেছে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎকোচের বিনিময়ে এইসব অপকর্ম ঢাকা দেওয়ার কারণে দীর্ঘ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদের পরিধি ছোট হয়ে আসছে।

রাঙামাটি নদী রক্ষা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, কাপ্তাই হ্রদ পুরো রাঙামাটি বাসিন্দাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। যদি এইভাবে হ্রদটি দখলের জোয়ারে ছোট হতে থাকে তাহলে পুরো জেলার চিত্র বদলে যাবে। জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের উচিত কাপ্তাই হ্রদের দিকে ভালবাসার নজর দেওয়া। পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মহলের নৈতিক দায়িত্ব- হ্রদ দখলকারিদের বিরুদ্ধে একযোগে সোচ্চার হওয়া। তাহলে কাপ্তাই হ্রদটিকে রক্ষা করা যাবে।
কাপ্তাই হ্রদ, ছবি: বাংলানিউজরাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বাংলানিউজকে জানান, আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব কাপ্তাই হ্রদকে দখলমুক্ত রাখা। পাশাপাশি হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করা।

তিনি আরও জানান, সভা-সেমিনার করে কোনো লাভ নেই। হ্রদ রক্ষার্থে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে এই ব্যাপারে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) একেএম মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, যারা যতো প্রভাবশালী হোক না কেন, যারা কাপ্তাই হ্রদ দখল করতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাপ্তাই শুধু একটি হ্রদ নয় এটি পুরো জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। হ্রদটি রক্ষা জেলার সকল মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

ডিসি মামুনুর রশীদ আরও বলেন, কেউ যদি কাপ্তাই হ্রদ দখল করে ভবন, ঘর-বাড়ি নির্মাণ করার কোনো তথ্য স্থানীয়দের কাছে থাকে তাহলে জেলা প্রশাসনকে জানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।