ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অন্ধত্বের কাছে হার মানেননি প্রতিবন্ধী নিখিল

জয়ন্ত জোয়াদ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
অন্ধত্বের কাছে হার মানেননি প্রতিবন্ধী নিখিল

মাগুরা: সকাল সাড়ে ৭টা। নতুন বাজার এলাকায় একটা চায়ের দোকানে বেশ কিছু মানুষের ভিড়।

একটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পেলাম সুমধুর গানের সুর।

‘আঁচল ভরা ফুল গো তোমার, অনচলা বুবুল, নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল, ফুল নেব না অশ্রু নেব। জোচনার সাথে চন্দনও দিয়ে মাখাবো তোমার গায়, রংধনু হতে লাল রং ছানি আলতা পরাবো তোমার পায়, আমার গানের সাথে সুর দিয়ে তোমার বাসর রচিব হে প্রিয়া, তোমারে ঘিরিয়া গাইব আমি কবিতার বুবুল, মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী খোঁপায় দিব তারার ফুল। ’

এভাবেই সোনালী দিনের গান শুনিয়ে যাচ্ছেন মাগুরা সদর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী নিখিল বিশ্বাস (৭২)। প্রতিদিন তিনি সকাল থেকেই ভ্যানে অথবা ইজিবাইকে করে জেলা শহরে এসে বিভিন্ন চায়ের দোকানে কখনো আড্ডার মাঝে মানুষকে গান শুনিয়ে টাকা আয় করেন। জন্ম থেকে অন্ধ হলেও রয়েছে অসম্ভব গানের সুর ও প্রতিভা। দুই চোখে কিছুই দেখতে পান না। কিন্তু তিনি বলে দিতে পারেন এখন সময় কত। এছাড়াও চলন্ত যেকোনো গাড়ির হর্ন শুনে বলে দিতে পারেন কি গাড়ি যাচ্ছে এবং গাড়ির নম্বর কত!

 

নিখিল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, জন্ম থেকেই আমি অন্ধ। কিছুই দেখতে পাই না। এই ভাবে চায়ের দোকানে কখনো বাসের যাত্রীদের গান শুনিয়ে টাকা আয় করে জীবন চলে আমার। মা-বাবা মারা গেছেন বেশ কিছু দিন হল। বর্তমানে আমি একাই আছি। আমার আর কেউ নেই। বাড়ি নেই, থাকার জায়গা নেই। খাওয়ার জায়গা নেই। রাতে একটা চায়ের দোকানে মশারি টানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আমার একটা ঘর হলে বাকি জীবনটা ভালভাবে কেটে যেত।

মাগুরা আঠারোখাদা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অমরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, নিখিল বিশ্বাস জন্ম থেকেই অন্ধ। তিনি ভিক্ষা করেন না। মানুষের গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে দুই, চার, পাঁচ টাকা দেয়। সেটা দিয়ে চলে তার জীবন। তার থাকার কোনো জায়গা নেই। আমি মনে করি সরকারিভাবে যদি তার একটা ঘর করে দেওয়া যেত, তার বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কেটে যেত।
 
মাগুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু বাংলানিউজকে বলেন, নিখিলকে প্রায় ২০ বছর ধরে দেখছি। তার গানের সুর খুব ভাল। মাঝে মধ্যে আমার অফিসে এসে তিনি গান শুনিয়ে যান। তিনি জন্ম থেকেই অন্ধ হলেও তার রয়েছে অসম্ভব প্রতিভা।
 
মাগুরা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ঝুমুর সরকার বাংলানিউজকে বলেন, তিনি আমাদের একজন নিয়মিত অন্ধ ভাতাভোগী। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য ঘর বরাদ্দের জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় তার নাম দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই আমরা তাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।