ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেই মেধাবী সুজনের পাশে ইউএনও

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
সেই মেধাবী সুজনের পাশে ইউএনও সুজনের হাতে সহায়তার টাকা তুলে দিচ্ছেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করে চলা অদম্য মেধাবী সেই সুজন মিয়ার পাশে দাঁড়ালেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।  

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুজনকে ডেকে নিয়ে তার হাতে আর্থিক সহায়তার টাকা তুলে দেন তিনি।

 

জানা গেছে, উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের জামুরটারী গ্রামের মৃত জমশের আলীর ছেলে সুজন মিয়া ছোট থেকেই মেধাবী। তার বাবা হোটেল শ্রমিক জমশের আলী ৭ বছর আগে  পেটের অসুখে মারা যান। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সুজনের মা শামছুন নাহার। দুই মেয়ে ও বড় ছেলের বিয়ে হলেও ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার পরিচালনায় বেশ হিমশিম খেতে হয় বিধবা শামছুন নাহারকে।

হোটেল শ্রমিক বড় ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে দৈনিক একশ টাকা মজুরি ও দুই বেলা খাবারের বিনিময়ে এক বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করেন শামছুন নাহার।

খাবার হিসেবে পাওয়া সেই ভাত বাড়িতে নিয়ে এসে দুই ছেলেসহ ভাগ করে খেয়ে নেন। সুজন মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম দুজনেই বেশ মেধাবী। পড়াশুনার প্রতি তাদের আগ্রহ প্রবল। টাকার কারণে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলেও ছেলেদের আগ্রহের কারণে নিজে না খেয়ে তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগান বিধবা শামছুন নাহার।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় বিধবা ভাতা পান শামছুন নাহার। সেই ভাতার টাকায় ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি। বসতভিটার জমিও নেই তাদের। প্রতিবেশী আত্মীয়ের দেড় শতাংশ জমিতে একটি ঘর নির্মাণ করে ছেলেদের নিয়ে বাস করেন তিনি।  

পিএসসিতে ‘এ’ প্লাস পেয়ে গ্রামবাসীকে হতবাক করে দেয় সুজন। এরপর ভর্তি হয় সাপ্টিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পরীক্ষার ফি শত ভাগ দিতে ব্যর্থ হলেও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসের সেরা ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে সে। এ বিদ্যালয় থেকে সে জেএসসিতে জিপিএ ৪.৮৬ এবং চলতি বছর এসএসসিতে জিপিএ ৪.৫০ অর্জন করে।

নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সুজন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির আবেদন করে। এরপর রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল টেকনোলজি ট্রেডে ভর্তির অনুমোদন লাভ করে। স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেয়েও খুশি হতে পারেনি সুজন। ভর্তির টাকা এবং রংপুরে থেকে লেখাপড়ার খরচ যোগানোর দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সুজন।  

ভর্তি ফি, থাকা, খাওয়া ও বই মিলে এখন সুজনের প্রয়োজন ১০/১২ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতি সেমিস্টার ফি যোগানো তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। মা শামছুন নাহার বিধবা ভাতা পান প্রতি তিন মাস পরে, মাত্র দেড় হাজার টাকা। সে টাকায় তো পলিটেকনিকে পড়ানো সম্ভব নয়। মাঝ পথে স্বপ্নকে বিসর্জন না দিতে বাধ্য হয়ে সমাজের বিত্তবানদের দুয়ারে ঘুরছে অদম্য মেধাবী এই তরুণ।

সুজনকে নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর 'অদম্য মেধাবী সুজন প্রকৌশলী হতে পারবে তো? ' এই শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দেখে সুজনের ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে মঙ্গলবার তাকে ডেকে নেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। তিনি সুজনকে ভর্তি হতে নগদ ৫ হাজার টাকা দেন। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অদম্য মেধাবী সুজনকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন।

সুজন বাংলানিউজকে বলেন, ভর্তির টাকা যোগার করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলাম। বাংলানিউজে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ব্যক্তিগতভাবে এক ব্যক্তি এবং ইউএনও মহোদয় আমাকে ভর্তির টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। আমি তাদের ঋণ কখনো ভুলবো না। সংবাদ প্রকাশ করে সহায়তার জন্য বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানান সুজন।

সুজনের বিধবা মা শামছুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, হামার সুজনের আশা পূরণ করতে যারা সাহায্য করেছেন আল্লায় তাদের মঙ্গল করবেন। সারা জীবন তাদের জন্য দোয়া করবো।

মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সহায়তা করায় বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখে সুজনকে ভর্তির জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরো প্রয়োজন হলে তাকে সহায়তা করা হবে। এছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীকে সহায়তার জন্য তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তা দেওয়া হবে। লেখাপড়ায় টাকা কোনো বাধা হবে না। প্রয়োজনে সরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

** অদম্য মেধাবী সুজন প্রকৌশলী হতে পারবে তো?

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।