ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খরচ বেড়েছে বরিশাল নৌ-রুটে, বিকল্প পথের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
খরচ বেড়েছে বরিশাল নৌ-রুটে, বিকল্প পথের দাবি মেঘনা নদী

বরিশাল: বরিশাল থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে বরিশালে যাতায়াতে আলাদা দু’টি নৌ-পথ ব্যবহার করছে যাত্রীবাহী নৌ-যানগুলো। ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের মিয়ারচর চ্যানেলের বিকল্প পথে যাতায়াতে বর্তমানে সময় ও খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছে নৌ-যান সংশ্লিষ্টরা।

সেই সঙ্গে উভয় পথেই ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাওয়াসহ নানা ঝুঁকিও রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। সেই সঙ্গে মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার বাবুগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন নৌ-পথটি চালুর দাবি নৌ-যান সংশ্লিষ্টদের।

যদিও সার্বিক দিক বিবেচনা করেই বৃহত্তর মেঘনা নদীতে ঢাকা-বরিশাল রুটের নৌ-পথ সচল রাখা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

নৌ-যান মাস্টার, চালক ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকমাস আগে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের মিয়ারচর চ্যানেলটি নাব্যতা সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। আর বিগত দিনে বারবার চেষ্টা চালিয়ে এ চ্যানেলটি সচল রাখতে না পারায় এবার বিকল্প চিন্তা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র বলছে, একমাত্র মিয়ারচর চ্যানেলটিকে সচল রাখতে গত কয়েকবছর টানা ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হয়েছে। আর বৃহত্তর মেঘনা নদীর এ পয়েন্টে নাব্যতা সংকটে খনন কাজ চালিয়ে গেলেও কয়েকদিন পরপর প্রাকৃতিক কারণে আবার চ্যানেলটিতে পলি জমে যায়। ফলে নাব্যতা সংকটে নৌ-পথটি বন্ধ হয়ে গেলে আবার খননের প্রয়োজন হয়। এছাড়া এটি আঁকাবাক ও সরু নৌ-পথ হওয়ার পাশাপাশি ভরা মৌসুমে মেঘনা উত্তাল থাকায় নৌ-যান চলাচল করতে গিয়েও নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও বরিশাল-হিজলা- মিয়ারচর-চাঁদপুর-ঢাকা পর্যন্ত এ নৌ-পথটিই সবচেয়ে স্বল্প দুরত্বের অর্থাৎ ১৪৮ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে লাগে আট থেকে নয় ঘণ্টা।
.সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, মিয়ারচর চ্যানেলটি চালু রাখার জন্য সরকারও বারবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ চ্যানেলটি আড়াআড়ি হওয়ায় দুই দিক থেকে পলি যুক্ত পানি এসে অল্প দিনেই চ্যানেলটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বারবার ড্রেজিং করে এ চ্যানেলটি রক্ষা করা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চ্যানেল ব্যবহারে নৌ-যান ডুবোচরে আটকে যায়। এমনকি হতে হয় দুর্ঘটনার শিকার।

তিনি বলেন, এ চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলেও যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌ-যান চালনা বন্ধ রাখা যাবে না। এবার মিয়ারচর বন্ধ হওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএয়ের সিদ্ধান্তে উলানিয়া-কালিগঞ্জ-ইলিশা হয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাতায়াত করতে হবে। এ পথে যাতায়াত করলে মিয়ারচরের থেকে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। এমনকি বড় লঞ্চগুলোর প্রায় পাঁচ ব্যারেল তেল বেশি লাগে।

পারাবত-১১ লঞ্চের মাস্টার বেল্লাল সিপাই ও শামীম মোল্লা বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে বর্তমানে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো যাওয়ার সময় হিজলা-মৌলভীরহাট-আবুপুর-হরিণা/আলুবাজার হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। আর ঢাকা থেকে উলানিয়া-ইলিশা হয়ে বরিশালে আসছে। উভয় পথেই মিয়ারচর চ্যানেল থেকে সময় বেশি লাগছে।

এদিকে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোকে আসা-যাওয়ার পথে পৃথক দু’টি চ্যানেল ব্যবহারের বিষয়ে লঞ্চ মাস্টার জানান, অসংখ্য ডুবোচর থাকলেও যাওয়ার সময় পানি বেশি থাকায় ছয় নম্বর ক্ষ্যাত হিজলা-মৌলভীরহাট-আবুপুর-হরিণা/আলুবাজার হয়ে ঢাকায় যাওয়া সম্ভব। তবে বরিশাল আসার পথে ভাটিতে নদীর পানি কম থাকায় উলানিয়া-কালিগঞ্জ-ইলিশা হয়ে আসতে হচ্ছে।

লঞ্চ মাস্টারদের মতে ছয় নম্বর চ্যানেল এতই সরু যেখানে পাশাপাশি দু’টি নৌযান চলাচল করা সম্ভব নয়, আর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর থাকায় আসন্ন শীত মৌসুমে খনন ছাড়া রুটটি ব্যবহার করা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া উলানিয়া ও ইলিশা স্রোতের গতিবেগ বেশি থাকায় বর্ষায় এ পথে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে।  
.ঢাকা-বরিশাল রুটের অপর লঞ্চের মাস্টাররা বলছেন, মিয়ারচর চ্যানেল ব্যবহার বন্ধের পর এখন যে দু’টি চ্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে সময় বেশি লাগছে এবং হিসেবে নিকেশ করে লঞ্চ চালাতে হচ্ছে। তবে মিয়ারচরের পাশেই উলানিয়া ও বাবুগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন যে নৌ-রুটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না। নিরাপদেই লঞ্চ চালনা সম্ভব হবে। আমাদের দাবি এ নৌ-রুট চালু করা হোক।  

মাস্টারদের মতে, বাবুগঞ্জ ঘাট সংলগ্ন নৌ-রুটের চ্যানেলের অল্প কিছু জায়গা খনন করা হলেই নির্বিঘ্নে নৌ-যান চলাচল করতে পারবে। এ চ্যানেলটি যেমন প্রশস্ত, তেমনি খাড়িও (নাব্যতা) রয়েছে। আর চ্যানেলটি মিয়াচরের মতো আড়াআড়ি নয়, সোজা। তাই সহসা পলি পড়ে ভড়াট হওয়ার সম্ভবনাও নেই।

যদিও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে হিজলা- মৌলভীরহাট- ছয় নম্বর - আবুপুর-হরিণা/আলুবাজার হয়ে ঢাকা নৌ-রুটের দুরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার যা পাড়ি দিতে সময় লাগে নয় ঘণ্টা। নৌ-পথটি ড্রেজিং করলে অনেক টেকসই হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচলের জন্য বেশ নিরাপদ হবে। এছাড়া এ পথটি ড্রেজিং করলে বরিশাল-ঢাকা চলাচলকারী নৌ-যানগুলো বর্তমানের চেয়ে আরও এক ঘণ্টা কম সময় লাগবে এবং জ্বালানি খরচও কম হবে।

এছাড়া বরিশাল থেকে উলানিয়া- ইলিশা হয়ে ঢাকার দুরত্ব ১৮১ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টার মতো। তবে বর্ষাকালে এ নৌ-পথটি উলানিয়া থেকে কালিগঞ্জ- ইলিশা পর্যন্ত বেশ অনিরাপদ। কেন না চ্যানেলের এ অংশ বেশ খরস্রোতা। এ নৌ-পথে নৌ-যান চলাচলে জ্বালানি খরচ বেশি পড়ে। তবে এ নৌ-চ্যানেলটি বেশ গভীর হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী মালবাহী নৌ-যান চলাচলের জন্য বেশ উপযোগী। এখানেও অল্পকিছু ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌ-যানের জন্য আলাদ চ্যানেল রাখার চিন্তা-ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। তবে সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএয়ের চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এ নৌ-পথ পরিদর্শনে এসে মিয়ারচর ব্যতিত তিনটি চ্যানেলের ওপরই গুরুত্বারোপ করেন এবং তিনটিই সচল রাখার কথাও জানান তিনি।

আর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, নদী ভাঙন রোধ ও নৌ-পথ নিরাপদ রাখতে পরিকল্পনা মাফিক ড্রেজিং করা হবে।

বাংলা‌দেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
এমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।