ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনার সড়কে নরক যন্ত্রণা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২০
খুলনার সড়কে নরক যন্ত্রণা! সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এম এ বারী লিংক রোডের বেহাল দশা, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এম এ বারী লিংক রোডটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্ষার কাদাপানি জমে গর্ত ও খানাখন্দ দিন দিন বড় হচ্ছে এটি।

আবার কোনো কোনো অংশে একাধিক গর্ত ও খানাখন্দ একাকার হয়ে রীতিমতো খালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ওই সড়কের যাত্রীদের প্রতিদিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।

আক্ষেপ করে বিরক্তির কথা জানান এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এ সড়কে প্রাইভেট কার দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সিটি বাইপাস সড়কে আমার প্রজেক্টে যেতে হয়। প্রতিদিনই গাড়ির কোন না কোন ক্ষতি হয়। সড়কের প্রায় ৯০ ভাগ অংশই এখন ভাঙা। সিংহভাগ জায়গার পিচ ও ইটের খোয়া উঠে গেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানা-খন্দের। চলমান বর্ষা মৌসুমে সড়কটিতে হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন সড়কটির বেহাল দশা থাকলেও কেউ সংস্কার করছে না। তাই বলা যায়, অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে আছে সড়কটি।

নোহা গাড়ির চালক রানা হাওলাদার বলেন, পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়। ভাঙা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে মন চায়না, কিন্তু নিরুপায় হয়ে আমাদেরকে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুবই কষ্ট হয়। বড় বড় ঝাঁকুনিতে দুই একদিন পরপর গাড়ির এই সমস্যা সেই সমস্যা দেখা দেয়। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এম এ বারী লিংক রোডের বেহাল দশা, ছবি: বাংলানিউজ

একাধিক বাস চালক জানান, রাস্তাটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দিন সংস্কারের কোনো ছোঁয়া পায়নি সড়কটি। ভাঙা এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে জয়বাংলার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক যেন মরণ ফাঁদ। দুর্ঘটনা এড়াতে বড় বড় গর্তে ভাঙা ইট ফেলে রাখা হয়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। ভোগান্তির কারণে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত দুষছে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের। এমনকি আঙুল তুলেও কথা বলতে দ্বিধা করছে না যাত্রীরা। খানা-খন্দে পরিপূর্ণ থাকায় সড়কটিতে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাটির অনেক স্থানে শুধু পিচই ওঠেনি, রাস্তার ইটও উঠে এখন ফাঁকা প্রায়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার গর্তে জমে হাঁটুপানি। এরপরও জনপ্রতিনিধিদের চোখে পড়েনি।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাইপাস সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালের ৩০ জুন। কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও এজিইডিকে সড়কটি হস্তান্তর করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। সড়কটির মহানগরীর অংশ রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এবং বাকি অংশ এলজিইডি।

কেডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মোর্তুজা আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তা সংস্কারে কেডিএ-এর করার কিছু থাকে না। কেডিএ-এর নিয়মে রাস্তা সংস্কার বা মেরামতের জন্য কোন বরাদ্দ থাকে না। সরকারও বরাদ্দ দেয় না। যে কারণে এ রাস্তাটি ২০১৩ সালে করার পরে আমরা সিটি করপোরেশনে দিয়ে দিয়েছি। সোনাডাঙ্গা থেকে ময়ূরী ব্রিজ পর্যন্ত খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও বাকি অংশটুকু এলজিইডিকে দেওয়া হয়েছে। এলজিইডি অনেকবার করতে চেয়েও করছে না। সিটি কর্পোরেশনও রাস্তাটিতে এখন পর্যন্ত কোন কাজ করেনি। যার জন্য রাস্তাটির এ অবস্থা হয়েছে। কেডিএ-এর আইনে আছে প্রথম প্রকল্পটি তারা করবে। পরে সেটা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেবে। আমরা তাই করেছি। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এম এ বারী লিংক রোডের বেহাল দশা, ছবি: বাংলানিউজ

এম এ বারী সড়ক প্রসঙ্গে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এজাজ মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সড়কটির বেহাল দশা সম্পর্কে আমি অবগত আছি। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে মেরামত কাজ শুরু করা হবে।

এদিকে এ সড়কটি ছাড়াও মহানগরীর আরেক প্রবেশ পথ শিপইয়ার্ড সড়কেরও বেহাল দশা। ভাঙা সড়কটিতে অসহনীয় যানজট যাত্রী ও পথচারীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এরসঙ্গে বর্ষা মৌসুমে যোগ হয় জলাবদ্ধতা। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই সড়কে পার হয়ে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এছাড়া মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্র শামসুর রহমান সড়কও ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির পর সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তাগুলো ঠিক সময়ে মেরামত না করায় ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

তবে নগরবাসীর জন্য সুখবর খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

মহানগরী ছাড়াও রূপসা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রূহুল আমিন সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কজুড়ে খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকছে পানি। ফলে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। এ সড়ক দিয়ে বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক, হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি এবং পাথর, কয়লা ও টাইলসের মাটির ভারী যানবাহন চলাচল করে।

এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম অহিদুজ্জামান বলেন, ৩ বছর আগে বীরশ্রেষ্ঠ রূহুল আমিন সড়কটি নির্মাণ করা হয়। মূলত বালু ব্যবসায়ীরা সড়কটি ধ্বংস করে ফেলেছে। এখন সংস্কার করতে হলে আগে বালুর ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২০
এমআরএম/জেআইএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।