ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেলেদের ওপর হামলার অভিযোগ শরণখোলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
জেলেদের ওপর হামলার অভিযোগ শরণখোলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের ওপর হামলার অভিযোগ শরণখোলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

বাগেরহাট: সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে দফায় দফায় জেলেদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের বিরুদ্ধে।  

হামলায় গুরুতর আহত হয়ে সোমবার (১০ আগস্ট) সকালে জেলে মামুন খান (৩২) শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়াও মারধরের স্বীকার আরও দুই জেলে একই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।  

আহত মামুন খান শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আব্দুল হক খানের ছেলে। রোববার (৯ আগস্ট) বিকেলে সুন্দরবনের দুধমুখী নদীর বালুর চর এলাকায় মামুন খানের ওপর হামলা করে ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও তার লোকজন। পরে সোমবার সকালে মামুন খানকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তার পরিবার।  

এদিকে, সোমবার সকালে একই স্থানে জেলে নান্টু ফরাজী ও নুর ইসলাম মল্লিকের ওপর অত্যাচার করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। তারাও শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহত মামুন খান বাংলানিউজকে বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজ লোক পাঠিয়েছিলেন আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার কাছে না যেয়ে ওই সময় সাগরে জাল ফেলে বালির খালে ফিরে আসি। তখন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন ‘তোর কাছে টাকা চাইছি টাকা দিসনি কেন’। তখন আমি বলি ‘আমি গরীব মানুষ কিভাবে টাকা দিব’। পরে আমার ট্রলারে থাকা ৪০টি মাছের মধ্যে ৩৮টি মাছ নিয়ে যায় তারা। পরে ভাইস চেয়ারম্যান, পারভেজ ও আলম তাদের ট্রলারে নিয়ে আমাকে মারধর করেন। আমাকে লাথি মারে। আমি এর বিচার চাই।

সোনাতলা এলাকার ইউপি সদস্য ডালিম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মামুনসহ জেলেরা দীর্ঘদিন সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে আসছিল। কিন্তু এ বছর ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও জাকির ব্যবসায় নেমে জেলেদের ওপর বিভিন্ন অত্যাচার শুরু করে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

রায়েন্দা ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এমাদুল শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ, সাবেক দস্যু নাছির, আলম ও জাকির সুন্দরবনে যেয়ে আমার জামাই মামুনকে মারধর করেছে। তার কাছে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রলার থেকে ৩৮টি মাছ নিয়ে গেছে। আমি এর শাস্তি চাই।  

জেলের স্বজনরা জানান, দফায় দফায় মাছ নিয়ে যাবে, টাকা দাবি করবে আর তাদের কথা না শুনলে মারধর করবে। এ রকম হলে আমরা কিভাবে বাঁচবো। আমরা ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজসহ অত্যাচারীদের বিচার চাই।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফরিদা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, শরীর ব্যাথা ও মাথার ডান পাশে কাটা দাগ নিয়ে একজন জেলে আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তার চিকিৎসা দিচ্ছি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, জেলেদের কাছ থেকে শুনেছি সুন্দরবনের যে জায়গায় ওই জেলেরা মাছ ধরছিল সেখানে ভাইস চেয়ারম্যানও মাছ ধরতে চেয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান জেলেদের ওখান থেকে চলে যেতে বললে তারা না যাওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা একজনকে মারধর করে। জেলেদের ডেকে আমি সব শুনেছি। জেলেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলেদের মারধরের ঘটনাটি অবশ্যই অমানবিক। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ কিভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।