ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচলেই যেন ঈদের আনন্দ

সাঈদুর রহমান রিমন/আজিজুল হাকিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১০
প্রিয়জনের প্রাণ বাঁচলেই যেন ঈদের আনন্দ

ঢাকা: ‘কিসের ঈদ, কিসের আনন্দ? পোলার জানডাই আমার হাজার ঈদের চান। হ্যায় বাঁচলে...আমার সব অইবো’ হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতর সন্তানের মুখ, মাথা, শরীরে হাত বুলাতে বুলাতেই কথাগুলো বলছিলেন সফুরা বেগম (৩৫)।

পুরুষাঙ্গ কর্তন ও গলাকাটা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু নেয়ামুলের (৮) মা তিনি।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার আশরাফবাদ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বস্তিতে সফুরা বেগমের। অভাবের সংসার হলেও তার বস্তির ছোট্ট ঘরে প্রতিবছর ছুঁয়ে যেত ঈদের আনন্দ। আনন্দ বলতে শিশু সন্তান নেয়ামুলকে নতুন জামা-কাপড় আর টুপি পরিয়ে ঈদ জামাতে পাঠানো, সেমাই খাওয়া, রঙ-বেরঙের বেলুন, বাঁশি কিনে দেওয়া...আরো কত কি ! এবারও ঈদের বায়না ছিল নেয়ামুলের। চেক লুঙ্গি, লাল রঙের পাঞ্জাবি আর একটা টেনিস বল।

কিন্তু হতভাগ্য নেয়ামুল এখন জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি। নিষ্পাপ দুই চোখে শুধু যন্ত্রণার চিহ্ন। গত রোববার কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ এলাকায় দুই কিশোর নেয়ামুলকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালায়। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। চিকিৎসক বলেছেন, তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।

হাসপাতালে নেয়ামুলের চেক লুঙ্গি-লাল পাঞ্জাবির বদলে মাথা গলা জুড়ে ব্যান্ডেজ বাধা। তাকে ঘিরে বাবা উমেদ আলী, মা সফুরা বেগম আর মামা আল-আমীনের সীমাহীন উৎকণ্ঠা, সার্বক্ষণিক অবস্থান। ঈদ নিয়ে আলাদা কোনো ভাবনাই নেই এখন তাদের। তাই মা সফুরা বেগমের এক কথা : ‘নেয়ামুলের জীবন বাঁচানোই আমার কাছে সবচে বড় ঈদ, সবচে বড় আনন্দ। ’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও রোগীর সঙ্গে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ কেমন কাটবে-তা জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল নানা আবেগ আর হতাশার কথা।

নীলফামারী থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আব্দুর রাজ্জাকের (৩২) সঙ্গে হাসপাতালে থাকা তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রোগী নিয়েই বাঁচা-মরা অবস্থায়। ঈদ নিয়ে ভাবতেই নিজেকে এতিম এতিম লাগছে। ’

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকার নবী হোসেন (৭০) ভর্তি হন গত ৬ সেপ্টেম্বর। পরদিনই অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল, কিন্তু শারিরিক অবস্থার কারণে অস্ত্রোপচারের তারিখ পিছিয়ে গেছে। ফলে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগেই অবস্থান করতে হচ্ছে তাকে। হাসপাতালে আসা-যাওয়া চলছে পরিবারের সদস্যের। নবী হোসেনের ছেলে মো. ইসমাইল বলেন, ‘বাবার অসুস্থতায় আমাদের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। এবার আমাদের ঈদ হচ্ছে না। ’

বুধবার বিকেলে মানুষের স্রোত যখন রাজধানীর মার্কেটে মার্কেটে। ঈদের নতুন জামা-কাপড় কেনা নিয়ে সবাই যখন ছোটাছুটিতে ব্যস্ত, সে সময়ে রোগী মানিকের বাবা রুহুল আমিনও ছোটাছুটি করছিলেন দোকানে দোকানে। তবে নতুন জামা-কাপড়ের জন্য নয়-নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য খুব জরুরি একটি বিদেশি ইনজেকশন আর কিছু ওষুধের খোঁজে তার ছোটাছুটির অন্ত ছিল না।

চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার মানিক মিয়া (২৫) ব্রেন স্ট্রোকজনিত কারণে কয়েকদিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে এ মুহূর্তেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন না বাবা রুহুল আমিন। বরং ছেলেকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য রুহুল আমিন তার স্ত্রী ও ছেলের বউকে হাসপাতালে আনিয়েছেন। রুহুল আমিন বলেন, ‘পরিবারের অর্ধেক সদস্য হাসপাতালে, বাকি অর্ধেক আছে গ্রামে। ঈদ কেমন কাটবে বুঝে নেন বাবাজি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘন্টা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।