ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশুদ্ধ পানির সংকটে তারা, দেখার কেউ নেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
বিশুদ্ধ পানির সংকটে তারা, দেখার কেউ নেই

রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির অন্যতম দূর্গম উপজেলার নাম জুরাছড়ি উপজেলা। আদমশুমারী অনুযায়ী এই এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। তবে বেসরকারি হিসাব মতে এর সংখ্যা আরো বেশি। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলাটির যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌ-পথ। এই উপজেলাটি চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে।

এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো অত্যন্ত দূর্গম এবং গিরিপথ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে দুমদুম্যা ইউনিয়নটি এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এবং দূর্গম এলাকা।

উপজেলা সদরের সঙ্গে এই ইউনিয়নটির যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌ-পথ। আর যোগাযোগের জন্য পানি পথে বরকল উপজেলার ঠেগামুখ হয়ে স্থানীয়দের পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২শ কিলোমিটার। এজন্য এলাকাটির বাসিন্দাদের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগে সময় লেগে যায় প্রায় তিনদিনের কাছাকাছি।

আর কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে পায়ে হেঁটে কঠিন গিরিপথ মাড়িয়ে তবে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। তাই জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ছাড়া ওই ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের আর কোনো বিকল্প পথ নেই।

এই ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই ইউনিয়নে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নেই, নেই বিদ্যুৎ। এই এলাকার প্রধান সমস্যা হলো-তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট।

অধিকাংশ স্থানীয়রা পাহাড়ি ছড়া (পাহাড়ি ঝরনা), কুয়া থেকে খাওয়ার পানি সরবরাহ করে। অনেকে আবার নদীর পানি ব্যবহার করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সেখানে নিরাপদ পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। একটু বৃষ্টি হলেই ময়লা-আবর্জনা এসে কুয়ার পানি অপরিষ্কার করে দেয়। যে কারণে সেখানকার অধিকাংশ শিশুরা বিভিন্ন সময়ে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত দুরারোগ্য রোগে ভুগে এবং চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

রাজস্থলী উপজেলার সমাজকর্মী ও আলোকচিত্রী শিল্পী রকি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, দুমদুম্যা ইউনিয়নটি বেশ দূর্গম। উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগ করা অত্যন্ত দূরূহ ব্যাপার। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্থানীয়দের নৌ-পথ এবং পাহাড়ি গিরিপথ মাড়িয়ে তিনদিন সময় লাগে।  

তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় নেই কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই, নেই বিদ্যুৎ। এই এলাকার অন্যতম সমস্যা হলো বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। বিশুদ্ধ খাবার পানি না থাকায় স্থানীয় শিশুরা নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। এ অঞ্চলে স্থানীয়দের কথা চিন্তা করে এবং তাদের সমস্যা লাঘবে সরকারের উচিত গভীর নলকূপ স্থাপন করা।

স্থানীয় সংবাদকর্মী স্মৃতি বিন্দু চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জুরাছড়ি উপজেলাটি এমনিতে দূর্গম এলাকা। এরমধ্যে ইউনিয়নগুলো আরো দূর্গম। গ্রীষ্মকালে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে জেলা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। আর উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর যোগাযোগ করা আরো কঠিন। এ এলাকাগুলোতে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো মধ্যে অন্যতম বিশুদ্ধ পানি সংকট।

তিনি আরো বলেন, দুমদুম্যা ইউনিয়নটি বেশ দূর্গম। এই এলাকার মানুষেরা সুপেয় খাবার পানির সংকটে ভুগছে বহু বছর ধরে। পানি সংকট নিরসনে অতীতে সরকার কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করলেও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগছে। পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন একজন নারী।  ছবি: বাংলানিউজদুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, জন্মলগ্ন থেকে আমাদের এলাকার অন্যতম সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানির সংকট। যে কারণে প্রতিবছর শত শত শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।

চেয়ারম্যান সাধন বলেন, আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে এই ব্যাপারে একাধিকবার অনুরোধ করেছি। তারাও আমাদের সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন। কিন্তু দীর্ঘ বছর পার হলেও এখনো এই সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।

সাধন কুমার চাকমা আরো বলেন, এখানে পানির লেয়ার পাওয়া অত সহজ নয়। প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট গভীরে গেলে পানির সন্ধান মিলে। এখানে বিদ্যুৎ নেই। তাই জেনারেটর এর ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি একটি নলকূপ স্থাপন করতে হলে এই প্রায় চার লাখ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে। যে কারণে দরিদ্রপীড়িত মানুষের পক্ষে এত টাকা খরচ করে নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব পর হয়ে উঠে না।

ওই চেয়ারম্যান আরো জানান, সরকার যদি এই এলাকায় একটু সুনজর দেন তাহলে এলাকাবাসী বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর হয়ে যাবে।

রাজস্থলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দুমদুম্যা ইউনিয়নটি অত্যন্ত দূগর্ম সীমান্তবর্তী এলাকা। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত পুরো এলাকা। দূর্গমতার কারণে যথাসময়ে সরকারি নানা সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। এখানে কাজ করতে হলে চরম বেগ পেতে হয়। তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে স্থানীয়রা।

ইউএনও আরো বলেন, এই এলাকার মূল প্রাণ হলো বগাখালী। তাই আমি এলাকার মানুষের কথা ভেবে নিজে স্ব-উদ্যোগী হয়ে এডিবির অর্থায়নে বগাখালী এলাকায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করার ব্যবস্থা করেছি। এই বছরের বর্ষা মৌসুমের শুরুতে নলকূপ স্থাপনের কাজটি শুরু করা হবে বলে ইউএনও যোগ করেন।

ইউএনও মাহফুজুর রহমান বলেন, নলকূপ স্থাপনের কাজটি মূলত জেলা পরিষদ করে থাকে। এই এলাকায় একটি নলকূপ স্থাপন করতে হলে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়ে। তাই জেলা পরিষদ যদি এই এলাকার মানুষের কথা ভেবে সুনজর দেয় তাহলে অতিসত্ত্বর এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিমিষে দূর হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।