ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যন্ত্রণার আরেক নাম ইজিবাইক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
যন্ত্রণার আরেক নাম ইজিবাইক!

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জবাসীর কাছে যন্ত্রণার অপর নাম হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক। শহরের অলিতে গলিতে চষে বেড়াচ্ছে এই অবৈধ যান। যাত্রীদের যাতায়াতে যেমন সুবিধা হয়েছে ঠিক তেমনি মরণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে ইঞ্জিনচালিত এই ইজিবাইকগুলো।

শহরের ভেতর পৌরসভা কর্তৃক চলাচলের জন্য ৫৫০টি ইজিবাইকের লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হলেও তা মানছে না লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইকের চালকরা। শহরের ভেতর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লাইসেন্সবিহীন এসব ইজিবাইক।

এতে প্রতিদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে রাস্তায় চলাচলের জন্য ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে পৌর কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের কথা বিবেচনায় রেখে মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে ৫৫০টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে। এই লাইসেন্স পৌরসভা থেকে পেতে অাবেদনের প্রেক্ষিতে ৭০০ টাকা ফি দিয়ে নম্বর প্লেট সংগ্রহ করতে হয়েছে।

শহরের ভেতরে চলছে ইজিবাইক।  ছবি: বাংলানিউজ

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে অাসা এই ইজিবাইকগুলো যাত্রী নিয়ে রওনা হওয়ার পথে হাসপাতাল গেট, ওয়ার্লেস গেট, জেলা পরিষদ গেট, খালপাড়, কোর্ট চত্বর, সুইট হ্যাভেন, মহিলা কলেজ গেট, কালিবাড়ী মোড়, প্রেসক্লাব, স্বর্ণকার পট্টি মোড়সহ নানান জায়গাতে থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামার কারণে শহরের রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এভাবে চলাচলের কারণে শহরে অহরহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে ফুটপাতে চলাচলরত পথচারীরা। এই ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট্ট শহর মানিকগঞ্জে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারের ওপরে এই অবৈধ ইজিবাইক চলাচল করছে।

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে পড়ুয়া ছাত্র ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, সকালে অামাদের ক্লাস থাকে যার কারণে তাড়াতাড়ি অাসার জন্য ইজিবাইকে করে আসি তারপরও মাঝে মধ্যে দেরি হয়ে যায়। কারণ রাস্তার উপরে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করে। শহরের ভেতর এত ইজিবাইক হয়েছে রাস্তা পারাপার হতে গেলেও অনেক সময় লেগে যায়।  

সেওতা এলাকার রুমা অাক্তার বাংলানিউজকে বলেন, শহরের ভেতর এত বেশি ইজিবাইক হয়েছে তা কল্পনার বাইরে। রাস্তায় বাচ্চাদের নিয়ে বের হলে ভয় করে, কখন যেন বাচ্চাদের ওপর ইজিবাইক উঠিয়ে দেয়। অধিকাংশ ইজিবাইকের চালক অপ্রাপ্ত বয়সী। শহরে ভেতর দিয়ে হেঁটে কোথাও যাবো বা রাস্তা পারাপার হবো সেই উপায়টুকুও এখন অার নেই, পুরো শহর যেন ইজিবাইকের দখলে।

জয়রা এলাকার ইজিবাইক চালক শুকুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা অনেক ছোট্ট শহর অার এই শহরের ভেতর প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক ইজিবাইক চলাচল করে। অধিকাংশ ইজিবাইকের লাইসেন্স নেই, লাইসেন্স নিতে গেলে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা দিতে হয় অথচ নির্ধারিত ফি হচ্ছে ৭০০ টাকা। যার কারণে অনেকেই লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করে শহরে চলাচল করছে।

পৌরসভার এই খামখেয়ালীর কারণেই বাইরের ইজিবাইকগুলো লাইসেন্স পেয়েছে অথচ পৌরসভার ভেতরে তারা লাইসেন্স থেকে বঞ্চিত।

লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইকের চালক সুমন বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভায় একাধিকবার গিয়ে লাইসেন্সের জন্য অাবেদন করেছি কিন্তু লাইসেন্স পাইনি যার কারণে বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি পৌরসভার ভেতরে। মাঝে মধ্যেই পুলিশ অভিযান চালায় তখন শহরের ভেতরে অাসি না, ওই সময় শহরের বাইরে চলাচল করি। অামরা গরীব মানুষ দিন অানি দিন খাই, আমাগো অল্প টাকার বিনিময়ে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করলে ভাল হতো। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে লাইসেন্স করমু সে টাকা ছয় মাসে অায়ও করতে পারমু না।

মানিকগঞ্জ জেলা অাওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম সুলতানুল আজম খান আপেল বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার ৩৫০টি ইজিবাইক চালক লাইসেন্স পেয়েছে বাকি ২০০টি ইজিবাইক চালক পৌরসভার বাইরের। তারা পৌরসভার অসাধু ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে। শহরের ভেতর প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক এই অবৈধ ইজিবাইক চলাচল করছে। যার কারণে শহরের ভেতর যানজট লেগেই থাকে। দশ মিনিটের রাস্তা ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট সময় লাগে। বিশেষ করে বিপাকে পড়ে স্কুলগামী শিশুরা। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে।  

শহরের ভেতরে দাঁড়িয়ে ইজিবাইক।  ছবি: বাংলানিউজ

এছাড়া শহরে লাইসেন্সধারী ইজিবাইক চলাচল করছে কি না তা পৌরসভার দেখার কথা থাকলেও তা দেখে না বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) গোলাম অাম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শহরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক দেখা মাত্রই গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে অাইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে অনেক সময় চোখের অাড়ালে দুই একটি লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক চলাচল করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হাজী কামরুল হুদা সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রী সাধারণের কথা চিন্তা করে ৫৫০টি ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইকের লাইসেন্স ও চালকের ড্রেসের ব্যবস্থা করেছি। শহরের ভেতর লাইসেন্সধারী ইজিবাইক ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে অাসা ইজিবাইক চলাচল করে। শহরের ভেতর যাতে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করে সে জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যারা বলছে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছি তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে। পৌরসভা কর্তৃক ৭০০ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদনের মাধ্যমে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad