ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নদী খননের নামে পৌনে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
নদী খননের নামে পৌনে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ইছামতি নদীতে হাঁটু পানি। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনায় ইছামতি নদী খননের নামে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল তুলে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে।ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

পাউবো সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের ৬৪টি জেলায় ছোট নদী, জলাশয়, খাল খননে (প্রথম পর্যায়ের) একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসেবে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের উপর দিয়ে বহমান ইছামতি নদী খননের জন্য স্থানীয় পাউবো ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

চলতি বছরের ১১ মার্চ কাগজে কলমে কাজ শুরু দেখানো হলেও মাঠ পর্যায়ে কোনো খনন হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এমনকি গত চার মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো শ্রমিকও এলাকায় খনন কাজে অংশ নেয়নি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো নদী খনন না হলেও ইতোমধ্যে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেটকে পরিশোধ করা হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, ইছামতি নদী খননে কোনো কাজই করা হয়নি। ঢাকার ৫৬-৫৭ মতিঝিলের শরীফ ম্যানশনের তৃতীয় তলার ‘এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেট’ নামের প্রতিষ্ঠানটি এই কাজ পেলেও ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী বা প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকায় একদিনের জন্য যাননি। তার পক্ষে আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে খাল খনন করার নামে নদীর পাড় ছেটে দিয়েছে।  
  
ভাড়ারা চরপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দোগাছির আলতাফ নামের এক ব্যক্তি ৫/ ৬ মাস আগে দড়িভাওডাঙ্গা নামকস্থানে কয়েকজন লেবার নিয়ে এসে নদী খননের ফটো তুলেই আবার চলে গেছে। এর পর একদিনও কোনো কাম হয়নি’।

সরেজমিনে দেখা গেছে ভাড়ারা থেকে দড়িভাওডাঙ্গা হয়ে আশুতোষপুর পর্যন্ত ইছামতির খাল খননের কোনো চিহ্ন নেই। বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে নদীতে হাঁটু পানি জমেছে। তাতে পাট জাগ দেওয়াও সম্ভব নয়।  

আব্দুস সাত্তার নামের রানীনগর গ্রামের এক কৃষক বলেন, নদী কাটা তো দূরের কথা শুধু আমাদের উঠতি ফসলগুলো ছেটে দিয়ে আলতাফ আমাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। ফসলের ক্ষতি বাবদ আমাদের কোনো কানাকড়িও দেওয়া হয়নি। ঠিকাদার ইছামতি খননের নামে সব টাকা আত্মসাত করেছে বলে গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি এর কিছু জানিনা। নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল নম্বর দিয়ে তিনি কলটি কেটে দেন।
 
বৃহস্পতিবার পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে খাল খনন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তার সামনেই খাল খননের নামে টাকা চুরির অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী গণরোষের মুখে পড়ে ফিরে আসেন।  

তবে পরে এক লিখিত বিবৃতিতে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক সাংবাদিকদের জানান, শিডিউল মোতাবেক খনন কাজের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার খাল এবং ১৬ মিটার প্রস্থ। মোট ৫২ দশমিক ৫০ মিটার খাল খনন করা হয়েছে। ‘যথাযথ’ ভাবে কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিডেটকে পরিশোধ করা হয়েছে। কাজের মান ভাল ছিল।
 
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারের নিয়োগকৃত স্থানীয় প্রতিনিধি দোগাছির আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

দীর্ঘদিন ধরে পাবনাবাসী ইছামতি নদী নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমান সরকার নদী রক্ষার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নদী খননের নামে অর্থ আত্মসাতকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মনে করেন সচেতন পাবনাবাসী। এবং ইছামতি নদী যথাযথভাবে খনন করে ঐতিহ্যবাহী পাবনা জেলা শহরকে প্রকৃতগতভাবে রক্ষা করা হবে বলে মনে করনে স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।