ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষায় আইন হচ্ছে

জসীম উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০
দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষায় আইন হচ্ছে

ঢাকা: দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী সরকারি কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে নতুন আইন হচ্ছে। আইনটি হলে তথ্য প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

প্রকাশ করা যাবে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরিচয়।

‘হুইসেল ব্লোয়ার প্রটেকশন অ্যাক্ট-২০১০’ নামে এ আইনের খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। সোমবার নীতিগত অনুমোদনের জন্য সেটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারি অফিসে অধস্তন কর্মকর্তা যদি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে দেন সেক্ষেত্রে তার হেনস্তা হওয়ার আশংকা থাকে। নানাভাবে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এজন্য দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে এ আইন করা হচ্ছে। ”

আইনটিতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সঠিক তথ্য প্রকাশ করলে তার সম্মতি ছাড়া তার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। সঠিক তথ্য প্রকাশের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি বা দেওয়ানি বা বিভাগীয় মামলা করা যাবে না। চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে তার পদানবতি, হয়রানিমূলক বদলি, বাধ্যতামূলক অবসর, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।

দুর্নীতির তথ্য শুধু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে কিংবা ই-মেইলে প্রকাশ করা যাবে বলেও ওই আইনে বলা হয়েছে।

অবশ্য গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্য কারো কাছে তথ্য প্রকাশের বিধান রাখা হয়নি আইনটিতে।

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করলে তথ্য প্রকাশকারীর পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আশংকা  থাকে। এমনটি যাতে না হয়, এ আইনে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। `

তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিলে দুই থেকে সাত বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানা এবং বিভাগীয় শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে এ আইনে।

এ ব্যাপারে শফিক আহমেদের ভাষ্য, ‘আমাদের দেশে অনেক সময় কাউকে ঘায়েল করার জন্য মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ প্রবণতা রোধ করার জন্যই  শাস্তির বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ’

এদিকে, এই আইন আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত  ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব গভর্নন্সে স্টাডিজ (আইজিএস) তাদের সুপারিশে বলেছে- গণমাধ্যমের কাছে তথ্য প্রকাশের বিধান না রাখায় এর উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কার কাছে তথ্য প্রকাশ করবেন তার  কোনো বাধ্যবাধকতা না রাখার পক্ষে মত দিয়ে আইজিএস বলেছে, আইনে যে কর্তৃপক্ষের কথা বলে দেওয়া হয়েছে তারাও দুর্নীতি পরায়ন হতে পারে। তাছাড়া অনেক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রকাশে ইচ্ছুক কর্মকর্তার প্রবেশাধিকারও নেই।

আইনে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা যদি সরকারি সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি অর্থের অনিয়মিত ও অননুমোদিত ব্যবহার, সরকারি সম্পদের অব্যবস্থাপনা, ক্ষমতার অপব্যবহার বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা, ফৌজদারি অপরাধ, বেআইনি কিংবা অবৈধ কর্মকাণ্ড, জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন কার্যকলাপে অতীতে জড়িত ছিলেন বা এখনো আছেন বা ভবিষ্যতে জড়িত হতে পারেন তবে সে তথ্য প্রকাশ করা যাবে।

যে সব কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রকাশ করা যাবে আইনে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে কোনো সংস্থার প্রধান, কোন সংস্থার অধীনস্ত অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কার্যালয়ের প্রধানের কাছে তথ্য প্রকাশ করা যাবে। ’

এছাড়া তথ্য যদি সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিষয়ে হয় তবে প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে স্পিকার, বিচারকর্ম বিভাগের সদস্যদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি অর্থ সংশ্লিষ্ট হলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অবৈধ ও অনৈতিক কর্ম সংশ্লিষ্ট তথ্য হলে পুলিশের কাছে প্রকাশ করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।