ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অ্যানথ্রাক্স আতংক: রাজশাহীতে গরুর মাংসের বিক্রি নেমে গেছে অর্ধেকে

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০
অ্যানথ্রাক্স আতংক: রাজশাহীতে গরুর মাংসের বিক্রি নেমে গেছে অর্ধেকে

রাজশাহী: শুক্রবার সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা।

রাজশাহী মহানগরীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট এলাকায় গরুর মাংস পট্টির একটি দোকানে সারি করে সাজানো গরুর রানসহ অন্যান্য অংশের ওপর থেকে গামছা দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছেন একজন।

অপর একজন হাঁকছেন- ভাই, আসুন ‘স্বাস্থ্য সম্মত’ মাংস কিনুন।

এর আগে কখনো কসাইদের মুখে এমন আকুতি শোনা যায়নি। কিন্তু এতেও সাড়া মিলছে না। কিছুদিন আগেও গরুর মাংস কিনতে হলে নগরীর নামী-দামী দোকানগুলোতে রীতিমত লাইনে দাঁড়াতে হতো, কসাইরা লাটসাহেবী কায়দায় অনেকটা অবজ্ঞাভরে সামলাতেন ক্রেতার ভীড়। এখন সে সব দোকানদাররা উল্টো সকরুণ চিৎকারে গলা ফাটাচ্ছেন ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণে।

শহরে গরুর মাংসের বাজারে আকষ্মিক এই পরিবর্তন এনে দিয়েছে ‘অ্যানথ্রাক্স আতংক’। অপরদিকে গরুর মাংসের নিয়মিত ক্রেতাদের প্রিয় এই আমিষ উপাদানটির প্রতি অনাগ্রহও জানান দিচ্ছে- অ্যানথ্রাক্স আতংক কতটা জেঁকে বসেছে সাধারণের মাঝে।

পাবনা-সিরাজগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ার পর সর্বশেষ নাটোরে একজন অ্যানথ্রাক্স রোগীর সন্ধান পাওয়ার প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর আমিষ বাজারে।

আর তাই রাজশাহী জেলা কিংবা মহানগরীতে এখন পর্যন্ত কোনও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের খবর পাওয়া না গেলেও শহরের অধিকাংশ মানুষ এখন গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।

দোকানীরা জানান, এর ফলে বাজারে গরুর মাংস কেনাবেচা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

নগরীর নিউমার্কেট এলাকার মাংস ব্যবসায়ী মিজান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানালেন, তারা সাধারণত শুক্রবারে ১০ থেকে ১২টি, অন্যান্য দিন ৭ থেকে ৮টি গরু জবাই করতেন। ভোর থেকে বেলা ১০টার মধ্যেই সব মাংস বিক্রি হয়ে যেত।

তিনি আপে করে বললেন, ‘গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আগের অর্ধেক গরু জবাই করেও সারা দিনে সেই মাংস বিক্রি শেষ করতে পারছি না। ’

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর সাহেব বাজার, উপশহর নিউ মার্কেট, কাদিরগঞ্জ, দড়িখরবোনা, হেতেম খাঁ, সাগরপাড়া, শালবাগান, বিনোদপুর, কাজলা, তালাইমারী, হরগ্রাম, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি কমে গেছে। এখন অধিকাংশ বাজারে সন্ধ্যার পরও গরুর মাংস নিয়ে বিক্রেতারা ক্রেতার অপোয় প্রহর গোণেন।

তবে লণীয় বিষয় হলো, বিক্রি কমলেও দামের হেরফের হয়নি। আগের মতোই প্রতি কেজি গরুর মাংস ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মহানগরীতে মাংস বিক্রি কমে যাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে চাপ বেড়েছে মাছ ও সবজির বাজারে। বিভিন্ন বাজারে মাছ ও সবজির চাহিদা এখন তুঙ্গে। সুযোগ বুঝে মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীরা অনন্যোপায় ক্রেতাদের পকেট থেকে কেটে নিচ্ছেন বাড়তি অর্থ।

অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিদেরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে যে সব দরিদ্র নারী গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের আওতায় সরকারের পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের ঋণ নিয়ে গাভী পালন শুরু করেছেন, তারা রীতিমত আতংকে রয়েছেন।

এদিকে রাজশাহী শহর গোস্ত ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মহসীন আলী  বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, সংবাদ মাধ্যমে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে ব্যাপকহারে মানুষের অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ার খবরের প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর বাজারে।

তিনি বলেন, ‘হাট থেকে সুস্থ-সবল গরু এনেই জবাই করছি। কিন্তু তারপরেও সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। ’

জবাইয়ের জন্য আনা গরুর স্বাস্থ্য পরীার বিষয়ে তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জবাই করার আগে গরুর স্বাস্থ্য পরীার বিধান থাকলেও তা হয় না।

সিটি কর্পোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ডা: ফরহাদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘নির্দিষ্ট পিলখানা (কসাইখানা) না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে নগরীতে গরুসহ অন্যান্য পশু জবাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত পিলখানার ব্যবস্থা হচ্ছে। ’

এ ব্যাপারে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা: জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনও অ্যানথ্রাক্স রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ডা: জহুরুল বলেন, ‘তবে জেলায় অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে অ্যাডভোকেসি শুরু হয়েছে। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে। ’

সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তার ওপরে অনিরাপদ পরিবেশে গরু জবাই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন আলাদা প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদেরকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি, তবে জোর তো করা যায় না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে পর্যাপ্ত অ্যানথ্রাক্স টিকা মওজুদ রয়েছে। প্রয়োজন দেখা দেওয়ামাত্র তা পাওয়া যাবে। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সোয়াই ফু’র সময়ে রাজশাহী মেডিকেল  কলেজ হাসপাতালে যে বিশেষ ইউনিট করা হয়েছিল, অ্যানথ্রাক্স রোগী পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সেখানে করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া আছে। ’

‘রাজশাহী জেলার আশপাশে প্রতিদিনই কিছু না কিছু মানুষ অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে ভয়ের কিছু নেই!’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।