ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নির্মাণ ব্যয় উসুলের পরেও ‘টোলবাজি’ শম্ভুগঞ্জ সেতুতে 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৬ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৮
নির্মাণ ব্যয় উসুলের পরেও ‘টোলবাজি’ শম্ভুগঞ্জ সেতুতে  শম্ভুগঞ্জ সেতু-ছবি-অনিক খান

ময়মনসিংহ: ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি যান চলাচল শুরু হয়। ৪৫৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতু পারাপারে ওই বছর থেকেই টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন। 

স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ সেতু’ হিসেবে পরিচিত এ সেতু নির্মাণে সাকুল্যে খরচ হয়েছিল ৪৩ কোটি টাকা।  

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরের মাথায় এ সেতুর ইজারা বাবদ খরচের দ্বিগুণ টাকা আয় হলেও এখনও টোলের ভার বইতে হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের।

এমনকি বছর বছর যানবাহনভেদে বাড়ছে টোল।  

স্থানীয় নাগরিক, পরিবহন মালিক-চালক-শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবৎ এ সেতুর টোল মওকুফের দাবি জানালেও মোটেও কর্ণপাত করছে না স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। উল্টো অর্থ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘দোহাই’ দিয়ে চলছে ‘টোলবাজি। ’

শম্ভুগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে-ছবি-অনিক খানজানা গেছে, ব্রক্ষপুত্র নদের ওপর নির্মিত এ সেতু দিয়ে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, শেরপুর, মদন, মোহনগঞ্জ, তাড়াইল, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বিরিশিরি, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাকসহ প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার যানবাহন চলাচল করে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইজারা বাবদ আদায় হয়েছে কমপক্ষে ৯০ কোটি টাকা। এ সেতুতে প্রতিটি যান থেকে কমপক্ষে ১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা আদায় করা হয়।  

২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এ সেতুটি ইজারা দেয় মেসার্স মোস্তফা কামাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।  

সরেজমিনে এ সেতুর টোল প্লাজায় অবস্থান করে দেখা গেছে, এ সেতুতে ট্রেইলারের টোল নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা।

হেভি ট্রাক ১৩৫ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১০০ টাকা, বড় বাস ৬৫ টাকা, মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা, পাওয়ার টিলার ৬০ টাকা, মিনিবাস ৩৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও হায়েস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ১৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।  

স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সেতু নির্মাণের খরচ উঠেছে সেই কবেই। অথচ এখনও প্রতি বছর কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই টোলের হার বাড়ছে। রাতে শম্ভুগঞ্জ সেতুটিতে কোনো সড়কবাতিই জ্বলে না। ওই সময় অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই যানবাহন চালাতে হয়।  

টোল প্লাজায় অবস্থানকালে আলাপ হয় গৌরীপুর টু ময়মনসিংহ সড়কের গোধূলী পরিবহনের চালক মামুন মিয়ার সঙ্গে। ৩৫ বছর বয়সী এ চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম খরচের টাকা উঠে গেছে। হয়তো এবার সেতু টোলমুক্ত করা হবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে টোলের হার বাড়ছে। এভাবে আর কতকাল টোল দিতে হবে?’ 

একই রকম কথা বলেন সুবর্ণা এক্সপ্রেসের চালক জসিম উদ্দিন। তার ভাষ্যে, ‘পরিবহন শ্রমিকদের রক্ত চুষে কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই টোল নেওয়া হচ্ছে। ’ 

তবে টোল আদায়কারী ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত হাসান ও ক্যাশিয়ার সুব্রত বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই টোল প্লাজা ইজারা নিয়েছি। আর দেশের অন্য সেতুর তুলনায় এ সেতুতে টোল অনেক কম। সরকার টোল মওকুফ করলে আমাদের কিছু করার নেই। ’ 

শম্ভুগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে গত বছরের নভেম্বরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ময়মনসিংহ জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন।  

পরবর্তীতে তারা বিভাগীয় কমিশনারসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।  

এ সেতুর টোল মওকুফের দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শম্ভুগঞ্জ সেতুতে টোল আদায় বন্ধ এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। সেতুর নির্মাণ খরচ উঠে দ্বিগুণ টাকা আদায় হলেও সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্টরা টোল আদায় করছে। অবিলম্বে টোল আদায় বন্ধ না হলে সব নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, টোল আদায় বন্ধের বিষয়টি মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। কারণ এখান থেকে আয় করা পুরো টাকাই অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়।  

পরবর্তীতে এ টাকা সওজসহ বিভিন্ন বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।  

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ সেতুর টোল আদায় করা হয়। এখানে স্থানীয় সড়ক বিভাগের কিছু করার নেই।  

সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসলে তখন টোল আদায় বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।