ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমি হাসিনা দাদুর মতোই প্রধানমন্ত্রী হতে চাই’

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
‘আমি হাসিনা দাদুর মতোই প্রধানমন্ত্রী হতে চাই’ নতুন দাদু প্রধানমন্ত্রীর ছবি হাতে সেঁজুতি। পাশে শেখ হাসিনার লেখা চিঠি

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার প্রমিজ চাইল্ড একাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সৈয়দা রওনক জাহান সেঁজুতি। নিজের প্রয়াত দাদুর সঙ্গে অদ্ভুতরকম মিল পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাদু সম্বোধন করে চিঠি লেখে সে। প্রধানমন্ত্রী সেই চিঠির উত্তরও দিয়েছেন। সেই উত্তর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা সেঁজুতি বলে ‘আমি হাসিনা দাদুর মতোই প্রধানমন্ত্রী হতে চাই।’ 

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার বাসায় গেলে সে তার এ লক্ষ্যের কথা দৃঢ়ভাবে জানায়। বলে, আমার দাদু শেখ হাসিনার সঙ্গে আমি দেখা করতে চাই।

আমি প্রধানমন্ত্রীর ছবি অনেক যত্ন করে রেখেছি। চিঠিটাও রেখে দিয়েছি। বারবার বের করে পড়ি। আমার নতুন দাদু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পাঠানো চিঠির উত্তর দিয়েছেন, এতেই আমি খুশি।

‘আমি আমার হাসিনা দাদুকে দেখতে চাই। আমি তাকে দেখতে পেলে আমি তাকেই চাইবো। আমি আমার দাদুকে চাই, আর কিছু না। টিভিতে যতবার দেখি আমি আমার দাদুকে মনে করি। দাদু আমাকে অনেক আদর করতেন। ’

সেঁজুতির বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর সেঁজুতির দাদু জুলেখা খাতুন মারা যান। সে সময় থেকে সেঁজুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে তার দাদুর চেহারা দেখতে পায়। সেই সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ২৫ মার্চ সে একটি চিঠি লেখে। ভালো ছাত্রী হিসেবে তার লেখা চিঠিটিও একেবারে খারাপ হয়নি। আর ওর অনেক আবদারে চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পোস্ট করি।

প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ডাক।  ইনসেটে সেঁজুতির লেখা চিঠি‘২৫ মার্চ রাতে টিভিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে সেঁজুতি নিজেই চিঠিটি লিখে। খুব কান্নার কারণে ২৯ মার্চ আমি বাধ্য হয়ে সোনারগাঁও পোস্ট অফিসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় সেটি পাঠাই। তবে বিশ্বাস ছিল না এসব চিঠি প্রধানমন্ত্রী এতো গুরুত্ব নিয়ে পড়বেন। কিন্তু এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় আপনি সেঁজুতির কি হন। সেঁজুতি প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছে সেটা প্রধানমন্ত্রী অনেকবার পড়েছেন। চিঠির উত্তরও লিখেছেন। যার জন্য সঠিক ঠিকানা প্রয়োজন। পরে আমি ঠিকানা মেসেজ করে পাঠাই। ২২ এপ্রিল দুপুরে চিঠিটি হাতে পাই। ’ 

চিঠিতে সেঁজুতি লেখে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আসসালামু আলাইকুম, তুমি কেমন আছ? দাদুকে হারিয়ে আমি ভালো নেই। তোমার মুখ আমার দাদুর মুখের মতো। বিশেষ করে তোমার নাক আমার দাদুর নাকের মতো। তাই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে টিভিতে দেখলে আমার দাদুর কথা মনে পড়ে। আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। তুমি আমাদের বাসায় বেড়াতে এসো। ’

সেঁজুতির বাবা মোগরাপাড়া এইচজিজিএস স্মৃতি বিদ্যায়তনের সহকারী শিক্ষক। মা নাজমা বেগম সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তার বড় ভাই সৈয়দ রাসেল মাহমুদ সাকিব সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ছোট ভাই সৈয়দ রফিকুল ইসলাম আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়েন। উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় মগরাপাড়া বাজারের সঙ্গে মোহাম্মদ হোসাইন পাপ্পু মিয়ার বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকে সেঁজুতি ও তার পরিবার।  

১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সেঁজুতির বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার মেয়ের লেখা একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন এবং সেটি বারবার পড়েছেন বলে জানানো হয়। গত ২২ এপ্রিল পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেঁজুতির চিঠির উত্তরে লেখেন, ‘প্রিয় সেঁজুতি, তোমার লেখা চিঠি পেয়েছি। আমার স্নেহ এবং শুভেচ্ছা গ্রহণ কর। আশা করি, তুমি বাবা, মা এবং বন্ধুদের নিয়ে খুব ভালো আছ। তোমার চিঠিটি আমি কয়েকবার পড়েছি। তোমার দাদুর জন্য দোয়া করেছি। তোমার দাদুকে মহান রাব্বুল আলামিন বেহেশত নসিব করুন। তুমি মনোযোগ দিয়ে লেখাপাড়া করবে এবং নিয়মিত স্কুলে যাবে। বাবা-মায়ের কথা শুনবে এবং বড় হয়ে দেশের সেবা করবে। তোমার জন্য আমার একটি ছবি পাঠালাম। অনেক অনেক দোয়া আর আদর রইল। ’

সেঁজুতির বাবা সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবাদে তিনি ছেলে-মেয়ে নিয়ে সোনারগাঁও বসবাস করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণায় মেয়ে সেঁজুতির লেখা চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। চিঠি পাঠানোর পর কোনো উত্তর না পেয়ে তার মেয়ে প্রথমে হতাশ হয়েছিল।

‘পরে হতাশা কেটেছে। যখন চিঠিটি পাঠানো হয়েছে জানানো হয় তখন থেকেই আমার মেয়ে ব্যাকুল হয় কখন আসবে উত্তর। পরে চিঠি আসার পর আমি আনতে গেলে আমাকে চিঠিটি দেওয়া হয় না। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের চিঠি সেঁজুতির স্বাক্ষর ছাড়া দেওয়া হবে না, পরে আমার মেয়েকে এনে স্বাক্ষর দিয়ে চিঠিটি নিয়ে যাই। ’

তিনি বলেন, আমি ও আমার মেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। আমার মেয়ে এখন শেখ হাসিনাকে দেখতে চায়।

সেঁজুতির মা নাজমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে এতোটাই খুশি যে সে সারাদিন শুধু নতুন দাদুর (শেখ হাসিনা) কথা বলে আর তার দেওয়া ছবি বুকে গুঁজে রাখে। চিঠির কয়েকটা ফটোকপিও করে রেখেছি। মেয়ে এখন বলে তার দাদুর অভাব পূরণ হয়েছে, আর টিভি ছেড়ে বসে থাকে তার দাদুকে দেখার জন্য। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।